নসরুল হামিদের বিপুল সম্পদ জব্দ: তদন্তে দুদক, অবরুদ্ধ ৭০ ব্যাংক হিসাব

টুইট ডেস্ক: দেশের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বড় ধরনের আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে।

রবিবার (২০ এপ্রিল) ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত এক আদেশে তার নামে থাকা বিপুল পরিমাণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ জব্দ এবং ৭০টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার অনুমোদন দেন।

জব্দ করা হয়েছে কোটি টাকার সম্পদ

দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, নসরুল হামিদের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে মোট ৩৭ কোটি ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার ৭৪৭ টাকার তথ্য। এসব অর্থ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা রয়েছে, যার উৎস এখনও যাচাই করা হয়নি।

এছাড়া তার নামে থাকা ঢাকার অভিজাত পরীবাগ এলাকার প্রিয় প্রাঙ্গণ ফ্ল্যাট ও বনানীর পিপি টাওয়ারে তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট জব্দ করা হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৮৫ লাখ ৫ হাজার ৯৪৭ টাকা।

তিনটি দামি ব্যক্তিগত গাড়িও জব্দের আওতায় আনা হয়েছে, যেগুলোর মোট বাজারমূল্য ধরা হয়েছে দুই কোটি ৪৭ লাখ ১১ হাজার ৫২৯ টাকা।

তদন্তের স্বার্থে জরুরি পদক্ষেপ

দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম আদালতে দেওয়া আবেদনে উল্লেখ করেন, এসব সম্পদ হস্তান্তর কিংবা মালিকানা পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। তদন্ত যাতে বাধাগ্রস্ত না হয় এবং সত্যতা নিশ্চিত করা যায়—সে কারণে আদালতের অনুমোদনে সম্পদ জব্দ ও ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

এছাড়া, এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি নসরুল হামিদ ও তার স্ত্রী সীমা হামিদের নামে থাকা ২০টি ব্যাংক হিসাব সাময়িকভাবে অবরুদ্ধ করেছিল আদালত।

অনুসন্ধান চলছে

দুদক জানিয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে এবং সম্পদের প্রকৃত উৎস ও বৈধতা যাচাই করা হচ্ছে। পাশাপাশি আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় এই সম্পদ কীভাবে অর্জিত হলো, সেসব বিষয়েই মূলত ফোকাস করছে তদন্ত কার্যক্রম।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এমন এক সময় এই পদক্ষেপ এলো যখন দেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি বিরোধী প্রচারণা নতুন করে জোরালো হয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ এই উদ্যোগকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে বলছেন, এটি রাজনীতির চাপ প্রয়োগের অংশও হতে পারে।

নসরুল হামিদ এক সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নকালে তার তত্ত্বাবধানেই হাজার কোটি টাকার চুক্তি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তার বিপুল সম্পদ অর্জনের বিষয়টি নিয়ে জনমনে দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্ন ছিল।

এই তদন্তের মধ্য দিয়ে একটি বার্তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে—ক্ষমতার উচ্চস্থানে থাকলেও কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। তবে তদন্ত কার্যক্রম যেন নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও আইনি প্রক্রিয়ার ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়, সে প্রত্যাশাই এখন জনগণের।