৩৬ রিয়েল এস্টেট কোম্পানির প্লট-ফ্ল্যাট না কেনার আহ্বান জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের

টুইট নিউজ ডেস্ক: জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (NHA) দেশের ৩৬টি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির নিবন্ধন সনদ বাতিল করেছে। এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে সরকারের অনুমোদন ছাড়া প্রকল্প গ্রহণ, নিবন্ধনের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া, নিয়ম না মানা, এবং কর্তৃপক্ষের চিঠির যথাযথ জবাব না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষকে এসব অননুমোদিত কোম্পানির প্রকল্প থেকে প্লট বা ফ্ল্যাট না কেনার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

কেন বাতিল হলো সনদ?

জাতীয় গৃহায়নের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানিকে সরকারের অনুমোদন ও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে প্রকল্প গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু বাতিল হওয়া ৩৬টি কোম্পানি এই নিয়ম অমান্য করে নিজেদের মতো প্রকল্প পরিচালনা করে আসছিল। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে লে-আউট না করে ও প্লট তৈরি না করেই জমি বিক্রি করেছে। তাছাড়া, প্রয়োজনীয় জনবল এবং নির্ধারিত শর্ত পূরণ না করেই বছরের পর বছর কার্যক্রম চালিয়েছে।

নিয়ম অনুযায়ী, নিবন্ধন সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে নবায়নের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অথচ এই ৩৬টি কোম্পানির অধিকাংশই ৭ থেকে ৯ বছর পর্যন্ত নিবন্ধন নবায়ন করেনি। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার চিঠি ও কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও তারা যথাযথ জবাব দেয়নি। এমনকি কারণ দর্শানোর শুনানিতেও অংশ নেয়নি তারা। অনেক প্রতিষ্ঠানের ঠিকানায় গিয়েও তাদের অফিস খুঁজে পায়নি কর্তৃপক্ষ।

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ২৪২তম বোর্ড সভার ২১ নম্বর সিদ্ধান্ত এবং পরবর্তীতে ২৬৬তম বোর্ড সভার ২৭ নম্বর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব কোম্পানির নিবন্ধন বাতিলের ঘোষণা দেওয়া হয়।

যেসব কোম্পানির সনদ বাতিল হয়েছে-১. ভিশন ২১ ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, ২. প্রিমিয়াম হাউজিং এস্টেট, ৩. এনা প্রপার্টিজ, ৪. গ্রেট ওয়ালস ল্যান্ড প্রপার্টি, ৫. গ্লোরিয়াস প্রপার্টিজ, ৬. ম্যাক্সিম হোল্ডিংস (প্রা.), ৭. তুরিন হাউজিং, ৮. বিওসিএল ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট, ৯. বেস্টওয়ে ল্যান্ড প্রপার্টিজ, ১০. বেস্টওয়ে ফাউন্ডেশন, ১১. সাফিজ ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট, ১২. আরডিপি প্রপার্টিজ, ১৩. গার্ডিয়ান রিয়েল এস্টেট, ১৪. ভেনাস হাউজিং অ্যান্ড রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট, ১৫. এফআইসিএল রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপার, ১৬. পারিজাত ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ডিজাইন, ১৭. দিশারী রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ১৮. ভেনিস অব বেঙ্গল প্রপার্টিজ, ১৯. বসুধা বিল্ডার্স, ২০. রূপান্তর ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ২১. প্রান্তিক প্রপার্টিজ, ২২. নেটওয়ার্ক ২০০৮ বিডি, ২৩. বসুতি বিল্ডার্স অ্যান্ড ডেভেলপারস, ২৪. এসএফএল চন্দ্রিমা সিটি, ২৫. হীরাঝিল প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট, ২৬. হার্ব হোল্ডিংস, ২৭. নবোদয় হাউজিং, ২৮. আমাদের বাড়ী, ২৯. নবধারা হাউজিং, ৩০. রিচমন্ড ডেভেলপারস, ৩১. পূবালী ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ৩২. ড্রিম প্যারাডাইজ প্রপার্টিজ, ৩৩. সবুজ ছায়া আবাসন, ৩৪. ইউরো বাংলা হাউজিং, ৩৫. সৃজন হাউজিং, ৩৬. ম্যাগপাই হাউজিং লিমিটেড।

জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান

জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করেছে—এসব কোম্পানি থেকে কেউ যেন প্লট বা ফ্ল্যাট না কেনেন। এসব অননুমোদিত প্রকল্পে বিনিয়োগ করে সাধারণ মানুষ যেন প্রতারিত না হন, সে জন্যই এ সতর্কবার্তা। রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুযায়ী, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন এলাকায় অননুমোদিত ও অনিবন্ধিত প্রকল্প গ্রহণ বা বিক্রয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

গৃহায়ন চেয়ারম্যানের বক্তব্য

জাতীয় গৃহায়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির বলেন, “যেসব কোম্পানি সরকারের শর্ত লঙ্ঘন করেছে, তাদের নিবন্ধন সনদ বাতিল করা হয়েছে। নির্ধারিত নিয়ম না মানায় এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি। তবে, এসব কোম্পানি যদি ভবিষ্যতে শর্ত পূরণ করে, তাহলে তারা আবারও নিবন্ধনের আবেদন করতে পারবে।”

রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা?

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাতিল হওয়া অনেক কোম্পানির সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক ও রাজনৈতিক মহলেও আলোচনা শুরু হয়েছে।