সহকারী শিক্ষকদের বেতন কাঠামোতে সুখবর: বদলে যাচ্ছে ভাগ্যের চাকা

বদিউল আলম লিংকন: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই যে স্বপ্ন বুকে ধারণ করে কাজ করে যাচ্ছেন, সেই স্বপ্ন এবার হয়তো বাস্তবে রূপ নিতে চলেছে।

শিক্ষকতা শুধু চাকরি নয়—এটা এক মানবিক দায়িত্ব, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের ব্রত। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এই দায়িত্বের ন্যায্য মূল্যায়ন নিয়ে শিক্ষকরা থেকেছেন হতাশা আর অবহেলার মাঝে। এবার সেই গ্লানি মোচনের পথ দেখিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টার সাম্প্রতিক ঘোষণা।

১৯ এপ্রিল শনিবার মাগুরা জেলা অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন,

“সহকারী শিক্ষক যখন নিয়োগ পাবেন, তখন তারা ১২তম গ্রেডে থাকবেন। চার বছর সফলভাবে কাজ করলে তারা ১১তম গ্রেডে পদোন্নতি পাবেন। আর প্রধান শিক্ষকরা থাকবেন ১০ম গ্রেডে।”

এই ঘোষণা শুধু একটি আর্থিক আশ্বাস নয়; এটি শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের কষ্ট, আত্মত্যাগ আর নিঃস্বার্থ সেবার প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির প্রতিচ্ছবি। এমন পদক্ষেপ শুধু শিক্ষক সমাজকেই উজ্জীবিত করবে না, প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানও বহুগুণে বাড়বে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।

উপদেষ্টা আরও জানান,

“এই প্রস্তাব মন্ত্রণালয় যৌক্তিক বলে মনে করেছে। এখন আমাদের কাজ হলো সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি বোঝানো এবং বাস্তবায়নে এগিয়ে যাওয়া। আমরা আন্তরিকভাবে সেই কাজ করে যাচ্ছি।”

ব্যবস্থাগত জটিলতা ও আশার আলোকরেখা

একদিকে প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ নিয়ে চলমান মামলার কারণে পদায়নে জটিলতা তৈরি হলেও, উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে এবং বড় আকারে পদায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এতে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে নতুন করে পদোন্নতির সুযোগ সৃষ্টি হবে।

অন্যদিকে, গণশিক্ষা উপদেষ্টা জানান,

“সারা দেশে একটি বড় সংখ্যক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ হবে। শিক্ষক নিয়োগের বিধিমালা প্রায় পাস হয়ে গেছে, আর পাস হলেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।”

মানবিক মূল্যায়নের দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্ব

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক স্তরই হলো ভিত্তি। এই স্তরের শিক্ষকদের পেশাগত মর্যাদা, অর্থনৈতিক সুরক্ষা এবং মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত না হলে জাতির মেরুদণ্ড মজবুত হবে না। তাই এই ঘোষণাকে শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখলে চলবে না—এটি হলো একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতাদের স্বীকৃতি দেওয়ার সূচনা।

এছাড়া জেলা প্রশাসক অহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক ড. শফিকুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

স্বপ্নের পথে এগিয়ে চলা

এই ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দেশের লক্ষ লক্ষ সহকারী শিক্ষকের মনে যে নতুন উদ্দীপনা জন্ম নিচ্ছে, তা যদি বাস্তবে রূপ পায়, তবে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা এক নতুন যুগে প্রবেশ করবে।

এখন শুধু প্রয়োজন—প্রতিশ্রুতিকে নীতিনির্ধারকদের আন্তরিকতায় পরিণত করে দ্রুত বাস্তবায়ন।