আসছে বাজেট ২০২৫-২৬: মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে গুরুত্ব
টুইট ডেস্ক: আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনৈতিক বাস্তবতা ও সীমাবদ্ধতার প্রেক্ষাপটে এবারের বাজেট হবে কিছুটা ভিন্ন রূপে।
বাজেটের আকার কমে আসছে আগের বছরের তুলনায়, একই সঙ্গে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির ওপর।
সূত্র অনুযায়ী, আসন্ন বাজেটের আকার প্রায় ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেটের আকার ৭ হাজার কোটি টাকা কমছে। সরকার আয় সংকটে পড়ায় বাজেট কমানোর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব আহরণ বাড়েনি উল্লেখযোগ্যভাবে, আবার বৈদেশিক সহায়তার ঋণ পরিশোধেও ব্যয় হচ্ছে বিপুল অঙ্কের অর্থ।
অন্তর্বর্তী সরকার উচ্চাভিলাষী ৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরে এসে ৫.৫ শতাংশের মতো বাস্তবসম্মত প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারে। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২ জুন টেলিভিশনে বাজেট ঘোষণা করবেন। যেহেতু বর্তমানে জাতীয় সংসদ নেই, তাই রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে এই বাজেট পাস হবে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাজেট বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, “৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এ মুহূর্তে অবাস্তব, এটা কল্পনার সঙ্গে কল্পনার তুলনা। রাজস্ব আয় যেখানে ৪ লাখ কোটি টাকাও কঠিন, সেখানে উচ্চাভিলাষী বাজেট ঘাটতি বাড়াবে।” তিনি আরও বলেন, “চলতি খাতে যেসব ভর্তুকি হ্রাস করা সম্ভব, যেমন রেমিট্যান্সে প্রদত্ত প্রণোদনা, তা সীমিত করে হতদরিদ্রদের জন্য বরাদ্দ বাড়ানো উচিত।”
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই হবে এবারের বাজেটের মূল লক্ষ্য। সরকার মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে পারে ৬.৫ শতাংশ, যদিও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলছে, মূল্যস্ফীতি থাকতে পারে ৮ শতাংশের আশপাশে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, মার্চে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৩৫ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারির তুলনায় সামান্য বেড়েছে।
বাজেট ঘাটতি কমিয়ে ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার নিচে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, যা আইএমএফ ও অর্থনীতিবিদদের পরামর্শের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যেখানে চলতি অর্থবছরের মূল বরাদ্দ ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কারের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইটি, দক্ষতা উন্নয়ন, ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতেও জোর দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ভাতা ও ভাতাভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য দেওয়া হতে পারে। অথচ চলতি অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা পরে কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে আদায় হয়েছে ২ লাখ ২১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৮ হাজার কোটি টাকায়, যা প্রায় ২১ শতাংশ।
রাজনৈতিক সরকারের অনুপস্থিতিতে এবারের বাজেট হবে বিশেষ একটি দৃষ্টান্ত। ২০০৭-০৮ সালে শেষবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা টেলিভিশনের পর্দায় বাজেট উপস্থাপন করেছিলেন। আবারও সেই পদ্ধতিতে বাজেট ঘোষণার পালা আসছে।
এই বাজেট শুধু সংখ্যার খেলা নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক অভ্যন্তরীণ চাপ, বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় তৈরি হচ্ছে।
বাজেট বাস্তবায়নে কার্যকর পরিকল্পনা ও গ্রহণযোগ্য রাজস্ব নীতিই হবে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়ার মূল চাবিকাঠি।