শেখ হাসিনাবিহীন নতুন আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি
টুইট নিউজ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। আলোচনায় উঠে এসেছে, আওয়ামী লীগ থাকবে ঠিকই, তবে দলটির নেতৃত্বে আর শেখ হাসিনা থাকবেন না। তার ঘনিষ্ঠ নেতারাও নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা জেলে কিংবা বিদেশে পলায়নপর। অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায়, দল আবার কবে সংগঠিতভাবে মাঠে ফিরবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
“আওয়ামী লীগ থাকবে, তবে শেখ হাসিনা নেতৃত্বে থাকবেন না। তার ঘনিষ্ঠরাও বাদ পড়বেন। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির কিছু নেতা-নেত্রীকে সামনে রেখে নতুন রূপে একটি ‘নব্য আওয়ামী লীগ’ গঠনের পরিকল্পনা চলছে।”
তবে এই পরিকল্পনাকে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা ‘প্রতারণা’ এবং ‘দল ধ্বংসের চক্রান্ত’ হিসেবে দেখছেন। তাদের ভাষ্য, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ টিকবে না।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ও শঙ্কা
ভারতের কূটনৈতিক মহলে এই সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। তাদের মতে, শেখ হাসিনার বিকল্প নেতৃত্বে যাদের নাম উঠে আসছে, তাদের কেউ কেউ পাকিস্তানঘনিষ্ঠ এবং ভাবমূর্তিতেও বিতর্কিত।
ভারতের এক সাবেক কূটনীতিক বলেন,
“আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবে ভারতের আস্থাভাজন। নেতৃত্ব যদি পাকিস্তানঘনিষ্ঠদের হাতে চলে যায়, তা হলে ভারতের জন্য তা বড় ধাক্কা হবে।”
২০০৭ সালের পুনরাবৃত্তি?
আওয়ামী লীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “২০০৭ সালেও শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে বিকল্প আওয়ামী লীগ গঠনের চেষ্টা হয়েছিল। তখনও তা ব্যর্থ হয়েছে। এবারও ব্যর্থ হবে।”
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় কংগ্রেস যেমন গান্ধী পরিবারের ওপর আস্থাশীল, তেমনি বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের প্রতি অনুগত।
তার মতে, “শেখ হাসিনাহীন আওয়ামী লীগ টিকবে না। এটি দল ধ্বংসের একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।”
দলে বিভ্রান্তি ও প্রতিরোধ
কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা এক আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, এই তথাকথিত ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’-এর পরিকল্পনাই এখন তাদের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথা। বিভিন্ন এলাকার নেতাদের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে- শেখ হাসিনার বিরোধিতা করলে নিরাপত্তা ও নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে। না মানলে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার- এমন হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ ভার্চুয়াল মিটিং আয়োজন করছে। শেখ হাসিনা নিজেই এসব মিটিংয়ে যুক্ত হচ্ছেন, কর্মীদের কথা শুনছেন। ইতোমধ্যে দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৩টিতে এই ভার্চুয়াল সভা সম্পন্ন হয়েছে।