ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক স্থগিত: এশিয়ার শেয়ারবাজারে উত্থান, ড. ইউনূসের ধন্যবাদ
টুইট ডেস্ক: বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারের অস্থিরতা এবং মন্দার আশঙ্কা সৃষ্টির পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীন ব্যতীত অন্য দেশগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন, যার ফলে এশিয়ার শেয়ারবাজারে উত্থান শুরু হয়েছে।
অধিকাংশ দেশের ওপর আরোপিত পরাস্পরিক শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করার কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
প্রধান উপদেষ্টার ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিত বিষয়ে প্রতিক্রিয়া
তার এ ঘোষণার পর ট্রাম্পকে ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে শুল্ক স্থগিতের ৯০ দিনের আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
সামাজিক মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা নিম্নলিখিত বার্তা শেয়ার করেছেন-
“ধন্যবাদ, মিঃ প্রেসিডেন্ট, (@POTUS) আমাদের শুল্কের উপর ৯০ দিনের বিরতি দেওয়ার অনুরোধে ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার জন্য। আমরা আপনার বাণিজ্যিক উদ্যোগে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।”
বিশ্বব্যাপী বাজারের অস্থিরতা এবং শুল্ক যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার মতামত প্রকাশ করেছেন। ড. ইউনূস মনে করেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা এবং শুল্ক বৃদ্ধি শুধুমাত্র বৃহৎ দেশগুলোর জন্য নয়, বরং উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে এর প্রভাব বেশি পড়বে।
তিনি বলেছেন, ‘‘অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে হলে আমাদের শুল্ক এবং বাণিজ্য নীতির মধ্যে সমন্বয় রাখতে হবে। শুল্কের প্রভাব শুধু বাণিজ্যের উপর নয়, এটি মানুষের জীবনযাত্রাকেও প্রভাবিত করে। আমরা যদি বৈশ্বিক অর্থনীতির অস্থিরতা কমাতে চাই, তবে শুল্ক যুদ্ধের মতো পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি।’’
ড. ইউনূস আরও বলেছেন, ‘‘মৌলিকভাবে, এ ধরনের শুল্ক যুদ্ধ মানে দরিদ্র দেশগুলো আরও বেশি দুর্ভোগে পড়বে এবং বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক নীতির মধ্যে বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরি হবে।’’
বিশ্ব অর্থনীতির যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে অনেক কিছুই ভবিষ্যতের প্রতি অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে। এর মধ্যে ড. ইউনূসের মতো অর্থনীতিবিদরা পরামর্শ দিচ্ছেন যে, এই অস্থির পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সমন্বিত এবং সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (৭ এপ্রিল) বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপ তিন মাসের জন্য স্থগিত করার অনুরোধ জানিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি লেখেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন ঘটেছিল। বিশেষ করে এশিয়া থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত শেয়ারবাজারে ব্যাপক ধাক্কা লেগেছিল, যা বৈশ্বিক শেয়ারবাজারকে চরম টালমাটাল পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেকটাই আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল বাজারে, কারণ ট্রাম্পের নীতি কখন কীভাবে পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছিল।
তবে, গত বুধবার (৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় রাতে ট্রাম্পের পক্ষ থেকে শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার পর এশিয়ার শেয়ারবাজারে এক উত্থান দেখা গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্তে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের শেয়ারবাজারে স্বস্তির পরিবেশ ফিরে এসেছে।
শেয়ারবাজারে উত্থান:
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে, শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হওয়ার পর, এশিয়ার অনেক শেয়ার সূচকেই উত্থান লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ করে জাপানের নিক্কি সূচক ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর পাশাপাশি, দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক ৫.৬ শতাংশ, সাংহাই কম্পোজিট ১ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাংসেং ২.৬ শতাংশ, তাইওয়ানের তাইয়েক্স ৯.২ শতাংশ এবং অস্ট্রেলিয়ার এএসএক্স সূচক ৪.৬ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে, এই সব সূচকগুলোতে নিম্নমুখী প্রবণতা ছিল।
এটি একটি বড় ধরনের প্রফুল্লতার প্রতিফলন, কারণ একদিন আগেই এশিয়ার বাজারগুলো ছিল হতাশাজনক।
অন্যান্য বাজারে উন্নতি
শেয়ারবাজারের পাশাপাশি অন্যান্য বাজারেও উন্নতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বন্ডের সুদহার ছয় মাসের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে গিয়েছিল, তবে বর্তমানে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সোনার দামও কিছুটা বেড়েছে, আউন্স প্রতি সোনার দাম ২৯.৪৫ ডলার বা ০.৯৯ শতাংশ বেড়ে ২৯৭০.৩৫ ডলারে পৌঁছেছে। তেলের দামেও বৃদ্ধি হয়েছে। ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম ১.৩৭ শতাংশ বেড়ে ৬৫.০৯ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এশিয়ার বাজারে উত্থান মূলত ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার ফলে এসেছে। এর আগে, চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারণে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারে নেমে গিয়েছিল। তবে শুল্ক স্থগিতের ঘোষণায় ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম আবারও বেড়ে ৬৫ ডলারে পৌঁছেছে।
এদিকে, গোল্ডম্যান স্যাকস মন্দার আশঙ্কা ৪৫ শতাংশ কমিয়েছে, যা আগে ৬৫ শতাংশ ছিল। যদিও তারা সতর্ক করে জানিয়েছে, শুল্ক হার আরও ১৫ শতাংশ বাড়তে পারে, তবে বাজারে আত্মবিশ্বাস ফিরে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের কৌশল:
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক সম্পর্কিত পদক্ষেপের বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাম্পের উদ্দেশ্য মূলত আলোচনায় সর্বোচ্চ সুবিধাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। ট্রাম্প শুরু থেকেই শুল্ককে একধরনের কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন, যা কিছুটা চীনকে কঠিন পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে।
ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের ঘোষণার পর বিশ্ব বাজারে যে সামান্য শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা একটি অস্থির বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক পরিবেশের আভাস দেয়।
তবে ড. ইউনূসের মতো বিশেষজ্ঞরা আশা প্রকাশ করেছেন, আলোচনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শুল্ক যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হলে বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশগুলোর মাঝে সহযোগিতার পথ খোলা উচিত।