বাংলাদেশে যেকোনো মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে থাকবে রাশিয়া
বিশ্ব ডেস্ক : বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডা ভি মানতিতস্কি। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে যেকোনো ধরনের মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পাশে থাকবে তার দেশ।
বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরামের জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘টকস উইথ অ্যাম্বাসেডর’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা এধরনের যেকোনো বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরোধী। আমরা এখানে (বাংলাদেশে) যেকোনো নিষেধাজ্ঞা বা অনুরূপ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে থাকব। দেখা যাক কী হয়।’
এখানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো কিছুই ঘটবে না বলে আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘আপনারা জিজ্ঞাসা করছেন রাশিয়া কী করবে, কিন্তু আমরা এখনও জানি না এখানে কী ঘটতে যাচ্ছে।’
রাষ্ট্রদূত মানতিতস্কি বলেছেন, রাশিয়া পশ্চিমের একতরফা নিষেধাজ্ঞাকে স্বীকৃতি দেয় না। আমরা শুধুমাত্র নিরাপত্তা পরিষদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা স্বীকার করি। তিনি বলেন, এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে বাংলাদেশকে কী ধরনের সহায়তা দেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
গত কিছুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিবৃতি দেয়া হচ্ছে। দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বাংলাদেশ সফর করে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন ও দাবি জানাচ্ছেন। নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেই ভিসা নীতির প্রয়োগও শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন কর্মকর্তারা।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কাছাকাছি সময়ে দলগুলোর মধ্যে সংলাপ করার জন্য ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে ঢাকায় মার্কিন দূত পিটার হাসকে। তবে তার সেই দুতিয়ালিতে কাজ হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপকে সমালোচনার চোখে দেখছে দেশটির অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের শামিল বলেও মনে করে দেশটি।
গত সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ঢাকায় এসে সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ প্রত্যাশিত নয়। বাংলাদেশ নিয়ে দেশ দুটিই পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দিয়ে আসছে।
বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠানে আসন্ন সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত ইতিবাচক জবাব দেন।
রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘জাতীয় আইনের ভিত্তিতে স্বাধীনভাবে, বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাহায্য ছাড়াই আগামী ৭ জানুয়ারি সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে আমাদের কোনো সন্দেহ নেই।’
২০২৩ সালের নভেম্বরের শুরুতে রাশিয়ান প্রশান্ত মহাসাগরীয় বহরের একটি বিচ্ছিন্ন যুদ্ধজাহাজ এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নৌ অংশীদারিত্ব জোরদার করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দরে শুভেচ্ছা ভ্রমণ করেছিলো। বিষয়টি নিয়ে কোনো গোপন বার্তা আছে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ভ্রমণ।
রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, আপনারা এটিকে কীভাবে দেখবেন তা আপনাদের উপর নির্ভর করে, তবে এটি একটি শুভেচ্ছা সফর ছিলো। অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলাপকালে রাষ্ট্রদূত বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পর বাংলাদেশ রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
তিনি বলেন, এমনকি কোভিড-১৯ মহামারিও একে বাধাগ্রস্ত করতে পারেনি। ২০২১ সালে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ২৯৭ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড গড়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ২০২২ সালে পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘বেআইনি’ একতরফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পরে উৎপাদন ও সরবরাহ শৃঙ্খল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাংলাদেশসহ বিদেশি অংশীদারদের সঙ্গে রাশিয়ার বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে বাণিজ্য লেনদেন ৬৪০ মিলিয়ন ডলার কমে গেছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জ্বালানি নিরাপত্তায় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার সম্পৃক্ততা শুধু নির্মাণকাজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; আমরা পারমাণবিক প্রকল্পের পুরো জীবনচক্র জুড়ে আমাদের বাংলাদেশি অংশীদারদের সহায়তা করব। যার মধ্যে চুল্লির জ্বালানির দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহ, উদ্ভিদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমাদের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাশিয়া বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক সেক্টর তৈরি করতে সহায়তা করছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার পূর্ণ সম্ভাবনা এখনও পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারেনি। এখন পরিস্থিতি পরিবর্তিত হচ্ছে, ২০২২ থেকে অনেক আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড রাশিয়া ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই রাশিয়ান ব্যবসায়ীরা নতুন সরবরাহকারীদের দিকে মনোযোগী হচ্ছে, এর মধ্যে বাংলাদেশের সরবরাহকারীরাও রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় বিনিয়োগেই বিলিয়ন ডলার আয় হতে পারে।
তিনি বলেন, রাশিয়ার কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস, মহাকাশ ও ভূতাত্ত্বিক গবেষণা, মেরিটাইম, রেলওয়ে ও বিমান পরিবহনের মতো খাতে বিভিন্ন যৌথ প্রকল্পে অংশ নিতে প্রস্তুত।
রুশ দূত বলেন, এসব বিষয় নিয়ে রাশিয়া-বাংলাদেশ আন্তঃসরকারি কমিশন অন ট্রেড, ইকোনমিক, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের পঞ্চম বৈঠকে আলোচনার পরিকল্পনা করা হয়েছে, আমরা ২০২৪ সালে এ বৈঠকে মুখোমুখি হওয়ার পরিকল্পনা করছি।