তাহিরপুরে অস্ত্রের মুখে ঘাটের টাকা লুটে নিলেন আওয়ামী লীগ নেতা!
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, কুলেন্দু শেখর দাস: সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা যাদুকাটা নদীর টোল ঘাটে সরকারি রয়্যালটি আদায়ের সময় ম্যানেজারের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা লুটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ আফতাব উদ্দিন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটে ৭ মার্চ। ইজারাকৃত ঘাটে রয়্যালটি আদায় করছিলেন ঘাট ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার গণি মিয়া। অভিযোগ রয়েছে, সেদিন বিকেলে আফতাব উদ্দিন তার সশস্ত্র দলবল নিয়ে এসে গণি মিয়াকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় ৩০ লাখ টাকা লুটে নেন। ঘটনার সময় বাধা দিলে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানান ম্যানেজার।
ঘাট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ইজারা নেওয়া নদী ঘাটে নিয়মিত রয়্যালটি আদায় হচ্ছিল। অথচ একজন সাবেক জনপ্রতিনিধি এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা প্রকাশ্যে এমন ঘটনা ঘটিয়ে আবারও এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছেন।
ঘাটের ম্যানেজার গণি মিয়া বলেন, “৭ মার্চ আফতাব উদ্দিন তার লোকজন নিয়ে এসে আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকার বস্তা নিয়ে যায়। আমরা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
ঘটনার ব্যাপারে আফতাব উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি, ফলে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তাহিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দিলোয়ার হোসেন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। অভিযুক্ত আফতাব উদ্দিন দাবি করেছেন, তিনি ওই টাকার অংশ পাওনা ছিলেন। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আফতাব উদ্দিন এর আগেও রাজনৈতিক সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে কারাভোগ করেছেন। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতা’র আন্দোলন চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন জহুর আলী নামে এক তরুণ। ওই ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের পাশাপাশি আফতাব উদ্দিনকেও আসামি করা হয়। দীর্ঘ কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তি পেয়ে তিনি এলাকায় ফিরে পুনরায় সক্রিয় হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সুশীল সমাজের মতে, বারবার এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নেরই ইঙ্গিত দেয়। জনপ্রতিনিধির পরিচয়ে এবং ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে কেউ যদি প্রকাশ্যে সন্ত্রাসমূলক কার্যক্রম চালায়, তাহলে আইনের শাসন কোথায় দাঁড়াবে?
স্থানীয়রা মনে করছেন, এই ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ও পারস্পরিক ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ রয়েছে। ইজারাকৃত ঘাটের রাজস্ব নিয়ে রাজনীতির প্রভাব বিস্তার এখানেও স্পষ্ট।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর নজরদারি এবং নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা ও সচেতন মহল।