বিনিয়োগের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে সরকার: প্রধান উপদেষ্টা
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বর্তমান যে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে, তা অতীতে কখনো ছিল না, বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক বৈঠকে এসব কথা বলেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “গত আট মাসে বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য এমন অনুকূল পরিবেশ এর আগে কখনো দেশে সৃষ্টি হয়নি।”
বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি ও বাংলাদেশে সুযোগ
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক প্রবর্তিত নতুন বাণিজ্য, শ্রম-সম্পর্কিত সংস্কার এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন বাংলাদেশের জন্য আরো বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। এর ফলে, দেশটিতে আরও চীনা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার উৎপাদন কারখানা স্থানান্তরিত হতে সাহায্য করবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমরা এখন বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এক অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছি। বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) প্রতি মাসে কোরিয়ান ও চীনা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মাসিক প্রাতঃরাশ বৈঠক আয়োজন করবে, যেখানে বিনিয়োগকারীদের সকল সমস্যা শোনা হবে।”
বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ শোনার জন্য হটলাইন চালুর প্রস্তাব
প্রধান উপদেষ্টা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ শুনতে ও দ্রুত সমাধানে একটি ডেডিকেটেড হটলাইন এবং কল সেন্টার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, “যেকোনো বিনিয়োগকারী এই নম্বরে কল করে তাদের অভিযোগ নথিভুক্ত করতে পারবেন এবং আমরা সেগুলোর দ্রুত সমাধান করব।”
চীনা বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি
বৈঠকে চীনা বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধি হিসেবে অন্তত ৩০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন, যারা বৈশ্বিক খাতে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে ছিলেন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম কোম্পানি মেইনল্যান্ড হেডগিয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট পলিন এনগান। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং বাংলাদেশে উৎপাদন কারখানা স্থাপনে আগ্রহী।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাম্প্রতিক বৈঠক
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বেইজিংয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তার সাম্প্রতিক শীর্ষ বৈঠকের বিষয়ে কথা বলেন। সেখানে, চীনা প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য চীনা কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বলেন, “চীনা কোম্পানির কর্মকর্তারা চট্টগ্রাম ও মংলায় চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।”
সেক্টর ভিত্তিক বিনিয়োগের আগ্রহ
চীনা কোম্পানির প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগে আগ্রহী। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেক্টরগুলো হলো-বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য শক্তি, উইন্ড টারবাইন, এবং সৌরবিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যান (EV) ট্রানজিশন, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি উৎপাদন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, অবকাঠামো- যেমন, বন্দর আধুনিকীকরণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও লজিস্টিকস।
এছাড়া, কিছু কোম্পানি বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের উৎপাদন এবং অপারেশন হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এখানে একটি তৈরি বাজার রয়েছে এবং আপনি নেপাল এবং ভুটানের মতো ল্যান্ডলকড দেশগুলোকেও পূরণ করতে পারেন।”
বৈঠকে বিডা (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদও উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস বিদেশি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় দেশ এবং এখানে বিনিয়োগের জন্য আরও বড় সুযোগ রয়েছে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং মানবসম্পদ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তরান্বিত করতে পারে।