ইসরায়েলি সেনার স্বীকারোক্তি: “চোখের সামনে যা পেয়েছি, তাকেই হত্যা করেছি”

“গাজার ধ্বংসস্তূপ: ইসরায়েলি সেনাদের স্বীকারোক্তি এবং মানবতার বিপর্যয়”

বদিউল আলম লিংকন: গাজার আকাশের ওপর যখন বোমার ভারী শব্দ গূঞ্জে ওঠে, তখন তার নিচে পড়ে থাকে অসংখ্য মানবিক বিপর্যয়ের চিহ্ন। নতুন করে প্রকাশিত এক স্বীকারোক্তির মাধ্যমে ইসরায়েলি সেনাদের বর্বরতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

একাধিক ইসরায়েলি সেনা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে বলেছে, “চোখের সামনে যা পেয়েছি, তাকেই হত্যা করেছি।” তাদের ভাষায়, “যতদূর চোখ গিয়েছে, চোখের সামনে যা কিছু পেয়েছে, ধ্বংস করা হয়েছে।” যুদ্ধের আসল নৃশংস চেহারা এখন মানুষের সামনে আসছে—এটা আর কোনো সাধারণ সংঘর্ষ নয়, এটা এক বিপর্যয়, যা শুধু ভূখণ্ডের নয়, মানবতারও।

গাজার বাফার জোন: এক হত্যার ক্ষেত্র

এই স্বীকারোক্তি থেকে জানা যায়, গাজার বাফার জোন, যেখানে বহু ফিলিস্তিনি বাস করতেন, ইসরায়েলি সেনারা তা পরিণত করেছে এক “কিলিং জোনে।” যে কোনো নড়াচড়া, যে কোনো জীবিত চিহ্ন চোখে পড়লেই তাকে গুলি করা হয়েছে। নারী, শিশু, বয়স্ক—কেউই রেহাই পায়নি। এমনকি, বাচ্চাদের খেলনার মতো সরঞ্জাম বা পোষা প্রাণীও বাদ যায়নি। “যতটুকু গুলি করতে পেরেছি, করেছি। এখানে শুধু হামাস নয়, তাদের পরিবারের সদস্য, পোষা কুকুর-বিড়াল সবাই নিহত হয়েছে,” বলে জানিয়েছেন একজন সেনা।

এ ধরনের বক্তব্য আমাদের সামনে এক প্রশ্ন দাঁড় করিয়ে দেয়: কীভাবে একজন সেনা তাদের সহযোদ্ধাদের আদেশের বাইরে গিয়েও নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যেতে পারে? একজন সৈন্য তার চোখের সামনে যাকে দেখে, তাকে হত্যা করবে—এটা কি আসলে “যুদ্ধের নিয়ম”? না, এটা কোনো নিয়মই নয়। এটা এক নিদারুণ মানবিক বিপর্যয়।

ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি আর স্বপ্নগুলো ধ্বংস

গাজার বাফার জোনে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি সেনারা কেবলমাত্র ঘরবাড়ি, কৃষিকাজের ক্ষেত, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেনি; তারা ফিলিস্তিনিদের স্বপ্নও ধ্বংস করে দিয়েছে। কৃষক নাদিল আলজানিনের কথায়, “এটি আমার ২০ বছরের স্বপ্ন ছিল, কিন্তু মাত্র ৫ মিনিটে তারা আমার সব শেষ করে দিয়েছে।” নাদিলের কথায়, শুধু বাড়ি নয়, তার পরিবার এবং আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতও তারা মুছে দিয়েছে।

এদিকে, একের পর এক হামলা ও যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন অভিযান শুরুর ফলে গাজায় জীবন যাপন আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশুরা, প্রতিদিন এক নতুন আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছে। ২০২৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৬৯৫ জন ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু, প্রাণ হারিয়েছেন।

এ ছাড়া, ৬ লাখেরও বেশি শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পোলিও টিকার অভাবে। এর মধ্যে গাজার শিশুদের শারীরিক এবং মানসিক পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠেছে।

বিশ্বের নীরবতা: কোথায় মানবাধিকার?

বিশ্ব সম্প্রদায়ের নীরবতা একটি বড় প্রশ্ন তুলে দেয়—যুদ্ধের এই নৃশংসতা দেখে, মানবাধিকার সংস্থাগুলি এবং জাতিসংঘের কণ্ঠ কেন চাপা পড়ছে? মানবতা কোথায় গেল? যদি আজই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হয়, তাহলে গাজা আর একদিনও বাঁচার জায়গা থাকবে না। সব কিছু শেষ হয়ে যাবে—ফিলিস্তিনিরা, তাদের স্বপ্ন, ভবিষ্যত, সবকিছু।

গাজার মানুষ নিজেদের স্বপ্নকে আবারও পুনরুজ্জীবিত করার সাহস পাবে কি না, তা প্রশ্নে রয়েছে। কিন্তু তারা এককভাবে আর কতটা যুদ্ধ করতে পারে? এই বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও মানবিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।

মানবতার প্রতি এই অবিচারের বিরুদ্ধে আজ আমাদের সম্মিলিত প্রতিবাদ জরুরি।