ইসরায়েলে সফররত দুই ব্রিটিশ এমপি আটক: কূটনৈতিক উত্তেজনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েল সফররত ব্রিটিশ পার্লামেন্টের দুইজন সদস্যকে আটক করেছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (৫ এপ্রিল) ইসরায়েল সফরে যাওয়া লেবার পার্টির এমপি ইউয়ান ইয়াং এবং আবতিসাম মোহাম্মদকে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ আটকে দেয় ও তাদের একটি সরকারি কার্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। তিনি শনিবার গভীর রাতে এক বিবৃতি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) দেওয়া পোস্টে বলেন, “ব্রিটিশ সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এমন আচরণ একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আমরা ইসরায়েল সরকারের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগে রয়েছি। এই ঘটনায় ব্রিটিশ জনগণ হতাশ ও উদ্বিগ্ন।”

কী ঘটেছিল?

স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউয়ান ইয়াং ও আবতিসাম মোহাম্মদ ব্রিটিশ পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে ইসরায়েলে পৌঁছান। সফরের অংশ হিসেবে তারা জেরুজালেমে অবস্থিত একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যালয় পরিদর্শনের পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সেখানে প্রবেশে বাধা দেয় ইসরায়েলি অভিবাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী।

ইসরায়েলের অভিবাসন মন্ত্রণালয় পরে এক বিবৃতিতে দাবি করে, “ওই দুই এমপির বিরুদ্ধে সন্দেহ রয়েছে যে, তারা ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম নথিভুক্ত ও গোপনে প্রচার করতে পারে। এছাড়াও, তাদের কার্যক্রমে ইসরায়েলবিরোধী ঘৃণা ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।”

আটক দুই এমপি কে?

উল্লেখ্য, ইউয়ান ইয়াং এবং আবতিসাম মোহাম্মদ দুজনেই ব্রিটেনের লেবার পার্টির সক্রিয় সদস্য এবং মানবাধিকার বিষয়ে সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ফিলিস্তিন সংকট, গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে বারবার মুখ খুলেছেন তারা।

আবতিসাম মোহাম্মদ ব্রিটেনে বসবাসরত আরব মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি, যিনি বারবার গাজার মানুষের ওপর হওয়া সহিংসতা ও মানবিক বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে বক্তব্য রেখেছেন। ইউয়ান ইয়াংও একইভাবে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো সংসদে উত্থাপন করে আলোচনায় এসেছেন।

কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্রিটেন ও ইসরায়েলের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। লন্ডনে নিযুক্ত ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে বলে ব্রিটিশ ফরেন অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে।

ইউরোপের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও রাজনৈতিক নেতারাও এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের চলাচলের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। এটা গণতন্ত্র ও আন্তর্জাতিক কূটনীতির পরিপন্থী।”

গাজা পরিস্থিতির পটভূমি

ইসরায়েল-হামাস সংঘাত এবং গাজায় ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গন অনেকটাই স্পর্শকাতর। গত বছরের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষে হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েল তার নিরাপত্তা নীতিকে আরও কঠোর করছে এবং সমালোচকদের ওপর নজরদারি বাড়িয়েছে।

ব্রিটিশ এমপিদের মুক্তি বা তাদের সফরসূচি পুনরায় চালুর বিষয়ে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো সুস্পষ্ট অবস্থান জানায়নি। ব্রিটিশ সরকার এ ঘটনায় কড়া বার্তা দিলেও, ঘটনাটি আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মঞ্চে আরও বিতর্কের জন্ম দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সফরকালে এভাবে আটকের ঘটনা শুধু ব্রিটেন-ইসরায়েল নয়, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্ব রাজনীতির উত্তেজনা কতটা তীব্র আকার ধারণ করেছে।