গাজা: নিঃশ্বাস নিতে চাওয়া মানুষের আর্তনাদ, বিশ্ব বিবেক কি নিঃশব্দ?

বিশেষ প্রতিবেদন: “আমরা ক্ষুধার্ত নই, আমরা শ্বাস নিতে পারছি না”—এক তরুণ সাংবাদিকের আর্তি আজ কাঁপিয়ে দিচ্ছে পুরো পৃথিবীকে।

“আমরা ক্ষুধার্ত নই, আমরা শ্বাস নিতে পারছি না।”

ইসরায়েলের লাগাতার বিমান হামলায় আজ এক রক্তাক্ত নাম ‘গাজা’।

অন্তহীন গোলাবর্ষণ, ট্যাংক হামলা, ড্রোন স্ট্রাইকে গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ১৩ হাজার শিশু। আহত কয়েক লক্ষ, ধ্বংস হয়ে গেছে বেশিরভাগ হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ ও আশ্রয়কেন্দ্র।

বাস্তবতার পরিসংখ্যান হয়তো এর শতগুণ ভয়াবহ।

অচল হাসপাতাল, নিঃশেষ জ্বালানি

গাজার হাসপাতালগুলো এখন শুধু নামেই হাসপাতাল। নেই অক্সিজেন, নেই বিদ্যুৎ, নেই জ্বালানি। যেখানে যুদ্ধ নয়, মৃত্যুই যেন নিয়মিত ঘটনা।

একজন চিকিৎসক বলেন—“আমরা জীবন বাঁচাতে পারছি না, শুধু মৃত্যুকে দেরি করার চেষ্টা করছি।”

ভেতরের খবর আসছে না বাইরের দুনিয়ায়

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আলজাজিরা, CNN, NBC সহ অনেক সংবাদমাধ্যমকে গাজা ত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।

ফলে এখন গাজার বাস্তবতা পৌঁছচ্ছে কেবল বাসিন্দাদের মোবাইল ভিডিও, স্ট্যাটাস আর মর্মস্পর্শী আর্তনাদের মাধ্যমে।

সালেহ আল জাফরীর আরেকটি স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে—
“আমাদের আর খাবারের প্রয়োজন নেই, দরকার কেবল অক্সিজেন!

কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হয়তো গাজা পৃথিবীর মানচিত্র থেকেই মুছে যাবে।

আমাদের আর খুঁজেও পাবে না কোথাও।”

প্রতিদিন মরছে শিশুরা, কাঁদছে পৃথিবী—কিন্তু বিশ্ব?

জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিবৃতি থাকলেও বাস্তব পদক্ষেপ প্রায় নেই বললেই চলে।

মুসলিম বিশ্ব, ওআইসি, আরব লীগ থেকেও নেই দৃশ্যমান প্রতিরোধ।

বিশ্বজুড়ে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করছেন—
এটা কি কেবল রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা, নাকি মানবতার মৃত্যু?

ছোট কিন্তু শক্ত প্রতিবাদ: পণ্য বর্জন

বিশ্বজুড়ে মুসলমানরা অন্তত বিবেকের দায় মেটাতে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের ডাক দিচ্ছেন।

সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি বাক্য:

“হাশরের ময়দানে যেন বলতে পারি—আমরা নিরস্ত্র হলেও প্রতিরোধ করেছিলাম।”

এই আর্তনাদ থাকবে ইতিহাসে, নাকি হারিয়ে যাবে বিস্মৃতিতে?

গাজার মানুষ এখন আর সাহায্যের আবেদন করছে না, কেবল পৃথিবীর বিবেককে জাগাতে চাইছে।
আজকের এই ভয়াবহতা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নয়—এটা মানবতার অস্তিত্বের প্রশ্ন।

বিশ্ব যদি আজও নীরব থাকে, তাহলে আগামী প্রজন্ম ইতিহাসে লিখবে—

“পৃথিবী দেখেছিল, কিন্তু কিছুই করেনি।”