ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন মিয়ানমারের সরকার প্রধান

টুইট ডেস্ক: মিয়ানমারের সামরিক সরকার প্রধান মিন অং হ্লাইং আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য BIMSTEC (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন) সম্মেলনে যোগ দেবেন। এটি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো দেশে তার অন্যতম বিরল সফর। নেপিদো চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তার বৈঠকের ব্যবস্থা করা যায়।

সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানায়, এই সফরের অংশ হিসেবে মিয়ানমারের সামরিক সরকার কূটনৈতিকভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে যাতে মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজন করা যায়। একইসঙ্গে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ অন্যান্য আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার পরিকল্পনা রয়েছে তার সরকারের।

আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ও কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর পর থেকে মিন অং হ্লাইং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন। তার নেতৃত্বে সামরিক বাহিনীর দমন-পীড়নের কারণে মিয়ানমারে ব্যাপক গৃহযুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

পশ্চিমা দেশগুলো ইতোমধ্যে তার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ানও (ASEAN) তার অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করেছে, কারণ তিনি জোটের শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, BIMSTEC সম্মেলনে যোগদান এবং আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের প্রচেষ্টা মূলত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের একটি কৌশল। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে তার সরকারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য তিনি এমন কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিচ্ছেন।

বৈঠকের সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান

রয়টার্স জানায়, মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তারা বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের অনুরোধ করেছেন। তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

একটি ভারতীয় সরকারি সূত্র জানায়, মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নয়া দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে মিন অং হ্লাইংয়ের বৈঠকের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, তবে ভারত এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সার্ক ও BIMSTEC শাখাও বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। ফলে এই বৈঠক আদৌ হবে কিনা, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

সফরের গুরুত্ব ও মিয়ানমারের বর্তমান অবস্থা

থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে যে BIMSTEC-এর সকল সদস্য দেশ এই সম্মেলনে উপস্থিত থাকবে। তবে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে চলমান আন্তর্জাতিক সমালোচনা এবং নিষেধাজ্ঞার কারণে অন্যান্য দেশের নেতারা তার সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহী হবেন কিনা, সেটি এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ।

২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে তীব্র রাজনৈতিক সংকট দেখা দেয়। জাতিসংঘের তথ্যানুযায়ী, দেশটির জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি বর্তমানে মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিন অং হ্লাইংয়ের এই সফর মূলত তার সরকারের বৈধতা প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার অংশ। সামরিক জান্তা দাবি করছে, তারা দেশকে স্থিতিশীল করতে চাইছে এবং আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করবে। তবে সমালোচকরা একে সামরিক শাসন দীর্ঘায়িত করার একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন।

আন্তর্জাতিক বিচারের মুখে মিন অং হ্লাইং

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠী মিন অং হ্লাইংকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী করছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার কারণে তার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) একটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এই পরিস্থিতিতে, তার আসন্ন থাইল্যান্ড সফর এবং বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা কতটা সফল হবে, তা নিয়েই চলছে আলোচনা। বিশ্লেষকরা বলছেন, মিয়ানমার সরকার বৈঠকের জন্য অনুরোধ করলেও বাংলাদেশের অবস্থান নিরপেক্ষ থাকতে পারে এবং সরাসরি আলোচনায় যেতে দ্বিধাগ্রস্ত হতে পারে।

তবে BIMSTEC-এর মতো আঞ্চলিক সহযোগিতা ফোরামে মিয়ানমার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ায়, অন্যান্য দেশগুলো কীভাবে এই কূটনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দেবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।