নাবিলের ঋণের বোঝা কর্মচারীদের কাঁধে
টুইট ডেস্ক: নাবিল গ্রুপের কর্মী নজরুল ইসলাম ও নাজমুল হাসান মাসিক যথাক্রমে ৪১,০২০ এবং ২৯,৫৩৮ টাকা বেতন পান। তবে আশ্চর্যের বিষয়, তারা আনোয়ার ফিড মিলস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক, যার জন্য ইসলামী ব্যাংক ১,৩৩৯ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে, নাবিল গ্রুপের ১৪ কর্মী ও সুবিধাভোগীদের নামে খোলা ৯টি কোম্পানিকে মোট ৯,৫৬৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে, যার আসল সুবিধাভোগী নাবিল গ্রুপ।
নাবিল গ্রুপের ঋণের পরিমাণ ও সংশ্লিষ্টতা
রাজশাহীভিত্তিক নাবিল গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক থেকে নামে-বেনামে মোট ১৩,৬৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যার বেশিরভাগই ২০২২ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুমোদিত হয় এবং এখনো খেলাপি হয়নি। নাবিল গ্রুপের কর্ণধার আমিনুল ইসলাম স্বপন, যিনি ২০২২ ও ২০২৩ সালে দেশের পঞ্চম বৃহত্তম ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক হয়ে ওঠেন।
জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
রাজশাহীতে জামায়াতে ইসলামীর এক সম্মেলন মঞ্চে আমিনুল ইসলাম স্বপনের উপস্থিতি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। তবে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমির কেরামত আলী জানান, স্বপন তার অজ্ঞাতসারে মঞ্চে উঠে পড়েন এবং তিনি জামায়াতের কোনো পর্যায়ের কর্মী নন।
সরকারি তদন্ত ও সম্পদের জব্দকরণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর নাবিল গ্রুপসহ ১০টি ব্যবসায়ী গ্রুপের বিরুদ্ধে ব্যাংক জালিয়াতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্তে ১১টি কমিটি গঠন করা হয়। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নাবিল গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে, যদিও কোম্পানির হিসাব সচল রয়েছে।
ঋণসীমা লঙ্ঘন ও ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া
ইসলামী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, নাবিল গ্রুপের ঋণ অনুমোদিত সীমার বাইরে চলে গেছে। ২০ মার্চ পর্যন্ত ঋণের স্থিতি ৯,৫৬৫ কোটি টাকা, যেখানে অনুমোদিত ঋণসীমা ৮,১১২ কোটি টাকা।
ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছেন, “টোটালি ফলস” (ডাহা মিথ্যা)।
নাবিল গ্রুপের প্রতিক্রিয়া
নাবিল গ্রুপের কর্ণধার আমিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, “একজন পিওনের নামে চাইলেই কি ঋণ নেওয়া যায়? ইসলামী ব্যাংক কেন তাদের নামে ঋণ দিল, তা তাদের ব্যাখ্যা করা উচিত।” তিনি দাবি করেন, ব্যাংক যদি বলে এসব ঋণের সুবিধাভোগী নাবিল গ্রুপ, তাহলে তিনি পুরো ঋণ পরিশোধ করবেন।
বেনামী কোম্পানির ঋণ পরিমাণ
নাবিল গ্রেইন ক্রপস: ১,০৭৭ কোটি টাকা
আনোয়ার ফিড মিলস: ১,৩৩৯ কোটি টাকা
মার্কেট মাস্টার এনালাইজার: ১,১৩৭ কোটি টাকা
জামান সিন্ডিকেট: ১,১৭৬ কোটি টাকা
আনোয়ারা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল: ১,১৬৭ কোটি টাকা
নাবা ফার্ম ও নাবা এগ্রো ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল: ১,৩২৫ কোটি টাকা
ইন্টারন্যাশনাল প্রোডাক্ট প্যালেস: ১,১৭১ কোটি টাকা
সুলতান অ্যাসোসিয়েটস: ১,১৭৩ কোটি টাকা
ব্যাংকের ভূমিকা ও সম্ভাব্য পদক্ষেপ
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন, ইসলামী ব্যাংকের ফরেনসিক অডিট করা হচ্ছে এবং নাবিল গ্রুপের অনিয়মগুলো বিবেচনায় নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন করে অনুমোদিত এসব ঋণের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর দায়বদ্ধতা রয়েছে। সরকারি তদন্ত চলমান থাকায় ভবিষ্যতে আরও তথ্য প্রকাশিত হতে পারে।