ইউনূসের আহ্বান: এশিয়ার যৌথ সমৃদ্ধির পথরেখা

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এশীয় দেশগুলোর সামনে একটি পরিষ্কার রোডম্যাপ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন, যা তাদের যৌথ ভবিষ্যৎ এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। তিনি বলেছেন, “আমাদের অর্থনীতিকে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক ব্যবসার নীতির ওপর ভিত্তি করে, যা ব্যবসার ভবিষ্যৎ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

বৃহস্পতিবার চীনের হাইনানে আয়োজিত বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া সম্মেলনে ইউনূস তার বক্তৃতায় এ আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, “এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। পরিবর্তনশীল এই বিশ্বে, আমাদের অবশ্যই একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে, যাতে আমরা যৌথ ভবিষ্যৎ এবং সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারি।”

ইউনূস উল্লেখ করেন, “এশিয়াকে অবশ্যই একটি টেকসই অর্থায়ন ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে, যা আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করবে এবং দেশের চ্যালেঞ্জ সমাধান করতে সাহায্য করবে।” তিনি বলেন, আঞ্চলিক বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিতে হবে।

উন্নত বাণিজ্য সহযোগিতা বাড়ানোর গুরুত্ব তুলে ধরে ইউনূস বলেন, “এশিয়া বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অন্তর্ভুক্তির দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে। এই দুর্বল যোগাযোগ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য সহযোগিতা দ্রুত বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে।”

কৃষি উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “এশীয় দেশগুলোকে অবশ্যই কৃষিতে টেকসই উন্নয়ন করতে হবে এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হবে।” তিনি মনে করেন, “টেকসই কৃষি প্রযুক্তি এবং জলবায়ু-বান্ধব উদ্ভাবন হতে পারে এই উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি।”

এশিয়াকে শক্তিশালী প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম গড়ার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন ইউনূস, যা হবে “নবায়নমূলক, সমতাভিত্তিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক”। তিনি বলেন, “আমাদের জ্ঞান এবং তথ্য ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগ করতে হবে। ডিজিটাল সমাধানে সহযোগিতা আমাদের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে।”

তিনি আরও বলেন, “বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ এবং যুবশক্তি এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার কেন্দ্রে থাকতে হবে।”

ইউনূস তার বক্তৃতায় এক নতুন সভ্যতার ভিত্তি স্থাপনের কথা বলেন, যেখানে “শূন্য-অপচয় নীতি অনুসরণ করা হবে এবং ভোগবাদ সীমাবদ্ধ থাকবে কেবল জরুরি চাহিদার মধ্যে।” তিনি বলেন, “আমাদের অর্থনীতিকে গড়ে তুলতে হবে সামাজিক ব্যবসার নীতির ওপর ভিত্তি করে, যেখানে উদ্ভাবন, লক্ষ্য এবং দায়িত্ব একসঙ্গে মিলিত হয়।”

ইউনূস যুবসমাজের উদ্দেশ্যে বলেন, “প্রত্যেক তরুণকে তিনটি লক্ষ্য অর্জনের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে-শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্ব।”

তিনি শেষে বলেন, “এটাই সেই যৌথ ভবিষ্যৎ, এবং আমাদের একসঙ্গে এশিয়াকে আরও বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।”