রাজনীতিতে এনসিপির নতুন মেরুকরণ: নির্বাচনকে ঘিরে প্রস্তুতি তুঙ্গে
টুইট ডেস্ক:দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে।
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা এই দলের ৩৫ জন নেতা বিভিন্ন আসনে প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। গণপরিষদ গঠনের কথা বললেও তারা ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও রাজনৈতিক কৌশল
এনসিপি সূত্রে জানা গেছে, দলটির বেশ কয়েকজন নেতা রাজনৈতিক পরিবারের হওয়ায় এলাকায় আগে থেকেই শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতারা দেশজুড়ে পরিচিতি পাওয়ায় তাদের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এছাড়া সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত নেতারাও নির্বাচনের মাঠে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন।
দলের কৌশলগত পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে:
স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দলে ভিড়িয়ে প্রার্থী করা।
নির্বাচন ঘনিয়ে এলে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের এনসিপিতে অন্তর্ভুক্ত করা।
দলীয় অভ্যন্তরীণ বিচার ও সংস্কারের পর নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়া।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানিয়েছেন, “অনেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকার জন্য পরিচিত, তারা আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। সিনিয়র সিটিজেনদেরও যুক্ত করা হবে। সারাদেশে বিস্তৃতি ঘটলে আরও অনেকে আসবেন।”
সংঘর্ষ ও প্রতিক্রিয়া
নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে এনসিপির নেতাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে।
নোয়াখালী-৬ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বিএনপি নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন। এনসিপির নেতারা মনে করছেন, এসব হামলা তাদের প্রতি জনসমর্থন বাড়াবে এবং রাজনৈতিকভাবে আরও প্রতিষ্ঠিত করবে।
একজন যুগ্ম আহ্বায়ক বলেন, “বিএনপি যার ওপরই হামলা করবে, তিনি এলাকায় বড় নেতা হয়ে উঠবেন।”
প্রার্থী ও নির্বাচনী প্রস্তুতি
এনসিপির বিভিন্ন নেতা ইতোমধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয় হয়েছেন:
ঢাকা-১১ (রামপুরা-বনশ্রী): এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
ঢাকা-১৭ (গুলশান-ক্যান্টনমেন্ট): সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা।
ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর): যুগ্ম সদস্য সচিব আকরাম হুসাইন।
ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি-কলাবাগান-নিউমার্কেট-হাজারীবাগ): অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
ভোলা-১: জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার): মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।
নোয়াখালী-৬: আবদুল হান্নান মাসউদ।
পঞ্চগড়-১: উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।
লক্ষ্মীপুর: যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আলম মাহি।
গাজীপুর-১: যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আলী নাছের খান।
কুমিল্লা-৩: আসিফ মাহমুদ সজীব (সম্ভাব্য)
টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর): মুখ্য সংগঠক অলিক।
চাঁদপুর-৫: মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
নারায়ণগঞ্জ: যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল্লাহ আল আমিন।
খুলনা-১: যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ভীম্পাল্লী ডেভিড রাজু।
নওগাঁ: কৈলাশ চন্দ্র রবিদাস।
কুড়িগ্রাম-১: যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ।
বরিশাল-৫: যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ডা. মাহমুদা মিতু।
সিলেট, কক্সবাজার, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নেত্রকোনা: বিভিন্ন তরুণ নেতা।
এনসিপি বিশ্বাস করে, জনগণের মাঝে সরাসরি গিয়ে তাদের কথা শুনে রাজনৈতিক ভিত্তি গড়ে তোলা হবে দলের মূল কৌশল।
শোডাউন ও প্রতিপক্ষের প্রতিক্রিয়া
এনসিপির নেতাদের গাড়িবহর নিয়ে শোডাউনের ঘটনায় সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, “যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে প্রচারণায় নামে, তাদের উদ্দেশ্য বোঝা যায়।”
এনসিপির পক্ষ থেকে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছেন, “৩০০ আসনে বিএনপির নেতারাই প্রতিদিন ৬০০ শোডাউন করছে। বিএনপি শোডাউনের রাজনীতি বন্ধ করুক, আমরা জনগণের কথা শুনতে চাই।”
নির্বাচনের জন্য এনসিপির প্রস্তুতি জোরদার হচ্ছে, সংঘর্ষের শিকার হওয়া নেতাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছে, এবং তারা বিভিন্ন কৌশল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দলটির বিস্তৃতি ও ভোটারদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু বাড়ে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।