সম্পদ অর্জনে জিরো থেকে হিরো নৌকার প্রার্থী কালাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীর ছয়টি আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) প্রার্থীদের আয় ও সম্পদের পরিমাণ গত পাঁচ বছরে বহুগুণ বেড়ে গেছে। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

হলফনামার তথ্যমতে, নতুন প্রার্থীদের মধ্যে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদের সম্পদের ছড়াছড়ি। গত ১২ বছরে শূন্য থেকে সম্পদ বেড়েছে হাজার গুন।

আবুল কালাম আজাদ প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। ওই নির্বাচনে হলফনামায় সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছিলেন সে তুলনায় বর্তমানে তার সম্পদ বেড়েছে হাজার গুণ। ২০১১ সালে প্রথমবার এবং ২০১৬ সালে দ্বিতীয়বার এবং ২০২১ সালে তৃতীয়বারের মত তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচিত হন আবুল কালাম আজাদ।

সংসদ সদস্য নির্বাচনে হলফনামায় আবুল কালাম আজাদ কৃষি খাত থেকে আয় দেখিয়েছেন এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে মাছচাষ থেকে বছরে আয় করেন ১ কোটি ১ লাখ টাকা। অন্যসব খাত থেকে এক বছরে আয় করেছেন ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

কিন্তু মেয়র হওয়ার আগে আবুল কালামের হাতে কোনো নগদ টাকা, মাছের খামার ও কৃষি জমি ছিল না।

আবুল কালাম মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার ব্যবহার করেন। এসবের মূল্য ৩৩ লাখ ৬৫ হাজার ৬০৭ টাকা। এছাড়া তিনি ১ কোটি ১৩ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের হার্ডজিপ ব্যবহার করেন। কালামের পিস্তল ও শর্টগানের দাম ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। তার ৪ দশমিক ৪ একর কৃষি জমি রয়েছে। এর মূল্য ৬২ লাখ ৫০ হাজার ৯০০ টাকা।

এছাড়া তার ১ কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা দামের পাকা ভবন রয়েছে। তার স্ত্রীর নামেও রয়েছে ২০ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সম্পত্তি। ১৭ লাখ টাকা দামের আবাসিক ভবন, ৫০ লাখ টাকা দামের বাণিজ্যিক ভবন, ৮৬ লাখ ৫২ হাজার টাকা দামের ৮৫ দশমিক ৫০ একর আয়তনের ১০টি মাছের খামারেরও মালিক আবুল কালাম আজাদ।

তার একক নামে বিভিন্ন ব্যাংকে ১ কোটি ৩৯ হাজার ৪৪৫ টাকা এবং স্ত্রীর সঙ্গে যৌথ নামে ৬৫ লাখ ৫০ হাজার ৬৩৮ টাকা ঋণ রয়েছে।

১২ বছরে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়া প্রসঙ্গে আবুল কালাম আজাদ বলেন, মাছচাষ করে বছরে তিনি কোটি টাকা আয় করেন। বিভিন্ন দোকান ভাড়া ছাড়াও কৃষি থেকে তার আয় আছে। ব্যাংক ঋণ নিয়ে তিনি ব্যবসা করেন।

মনোনয়নপত্রের সাথে প্রার্থীর হলফনামা জমা দেয়ার নিয়ম কার্যকর হয় ২০০৮ সাল থেকে। প্রার্থীর আয়-ব্যয়, সম্পদের হিসাব এবং তার উপর নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদের হিসাব সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে।

হলফনামায় দেয়া সম্পদের তথ্য অনুযায়ী; আয় ও সম্পদ বাড়ার পর তা নিয়ে সমালোচনা অবশ্য এবারই প্রথম নয়।

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করা প্রতিষ্ঠান “সুজন” ২০১৪ সালের নির্বাচন অংশ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ ৪৮ জন প্রার্থীর ২০০৮ সালের হলফনামা ও ২০১৪ সালের হলফনামা পর্যালোচনা করেছিল। তখন প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, বেশ কয়েক জন প্রার্থীর আয় ২০০৮ সালের তুলনায় ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ ৮ হাজার গুণ পর্যন্ত বেড়েছে।

সবশেষ ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এতে অংশ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ ৫৩ জন প্রার্থী; যারা দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, তাদের হলফনামার আয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক “সুজন”।

সেখানে বলা হয়, সর্বমোট ৫৩ জন প্রার্থীর আয় গড়ে ১০৬.৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। আয় বৃদ্ধির এই হার ১০.৯১ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১১৫২.০৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।