নির্বাচনের আগে ‘গণভোটে সংবিধান সংস্কার চায়’ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
টুইট ডেস্ক: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ১৫১টি প্রস্তাবে একমত, ১০টি আংশিকভাবে একমত এবং ৫টিতে একমত নয় বলে জানিয়েছেন কাইয়ুম। জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম।
জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘গণভোটের মাধ্যমে সংবিধান সংস্কারের’ প্রস্তাব দিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে ১৫১টিতে তারা একমত বলেও জানিয়েছেন দলটির প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম।
রোববার জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনার বিষয় তুলে ধরছিলেন তিনি।
সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হয়ে বৈঠকটি চলে বেলা প্রায় সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাত সদস্য প্রতিনিধিত্ব করেন।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কারী কাইয়ুম বলেন, ”সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হলে গণভোটের মাধ্যমে গ্রহণ করতে রাজি আছি।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টি প্রস্তাবের মধ্যে, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ১৫১টি প্রস্তাবে একমত, ১০টি আংশিকভাবে একমত এবং ৫টিতে একমত নয় বলে জানিয়েছেন কাইয়ুম। একই সঙ্গে দলটি অতিরিক্ত ২টি মতামত দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন
সংবিধান সংস্কার নিয়ে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে আমরা যে যে জায়গায় সবাই একমত হব, যতটুকু সংস্কার হওয়া প্রয়োজন, সেটা বাস্তবায়নের জন্য গণভোটের মাধ্যমেও করা হয়, তা মেনে নেব। আমরা প্রধানত চাই সংস্কারটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কিংবা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে হয়। এটা যেন নির্বাচিত সংসদের হাতে চলে যায়, এরকমটা না হয়ে, আগে হয়। সেটা গণভোট বা সংবিধান সংস্কার সভার নির্বাচন হতে পারে।”
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করে।
জুলাই-অগাস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এরইমধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন, পুলিশ সংস্কার, স্থানীয় সরকার সংস্কার ও গণমাধ্যমের জন্যে গঠিত আট কমিশন তাদের সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন স্বাস্থ্য, শ্রম, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন বাকি আছে।
জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম।
জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম।
প্রতিবেদনে আসা গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর মতামত জানাতে ৩৮টি রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ জানিয়েছিল ঐকমত্য কমিশনন। ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু হয়েছে গত ২০ মার্চ থেকে।
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব ৬ মাসে-
কাইয়ুম বলেছেন ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে তারা ‘ধর্মনিরপেক্ষতা নীতিমালা’ অন্য নামে রাখার কথা বলেছেন।
বহুত্ববাদের পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতা যে অনুচ্ছেদ ছিল, ওখানে শিরোনামে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বলে বাকি আগে যা কিছু ছিল তা অক্ষুণ্ণ রাখা।
মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নর জন্য জেলায় জেলায় নাগরিক আদালত করার প্রস্তাব রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন করেছে বলে জানিয়েছে হাসনাত কাইয়ুম।
তিনি বলেন, একই সঙ্গে পুরনো ১৯ জেলায় জেলা সরকার স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বাধীনতা পাবে।
পাচার হওয়া টাকা আদায় করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আদালতের আদলে বিশেষ অর্থনৈতিক ট্রাইবুনাল করার প্রস্তাব দলটি দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন কাইয়ুম।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন নির্ধারিত ছয় মাসের মধ্যে সম্ভব বলে মনে করেন কাইয়ুম।
সংস্কারের মাধ্যমে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো চেষ্টা হচ্ছে বলে বিএনপির যে অভিযোগ তুলেছে, সে বিসয়ে হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “আমরা জাতীয় সংবিধান কাউন্সিলের পক্ষে। স্বাভাবিক অবস্থায় এনসিসিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিই বেশি থাকবে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যখন তাদের প্রতিনিধি থাকবে তখন মনে হবে অনির্বাচিত প্রতিনিধি বেশি। এটা তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কনসেপ্টের সঙ্গে বিরোধ করে না।”
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ ছাড়াও কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার উপস্থিত ছিলেন।
ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। এছাড়া কমিশনের সদস্য হিসেবে রয়েছেন- জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।