ব্যাংক আমানত সুরক্ষা: অর্থ মন্ত্রণালয়ের খসড়া ও মতামত আহ্বান
- খসড়া প্রকাশ, ৯৪.৬% আমানত ফেরতের গ্যারান্টি
- বাংলাদেশে নতুন ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ নিয়ে সরকারের উদ্যোগ
টুইট ডেস্ক: ব্যাংক আমানত বীমা আইন বাতিল করে নতুন ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ জারি করতে যাচ্ছে সরকার। জনগণের আস্থা বাড়িয়ে আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। গত বৃহস্পতিবার খসড়া প্রকাশ করে অংশীজনদের মতামত চেয়েছে মন্ত্রণালয়।
আইনের মূল উদ্দেশ্য ও পরিধি
নতুন অধ্যাদেশের উদ্দেশ্য হলো ব্যাংক ও অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (NBFI) রাখা আমানতের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এটি বাস্তবায়িত হলে ব্যাংকের পাশাপাশি NBFI-এর আমানতও বীমার আওতায় আসবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রক্রিয়ার তত্ত্বাবধানে থাকবে এবং কোনো ব্যাংক বিলুপ্ত হলে প্রত্যেক আমানতকারীকে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা ফেরত দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।
আইনের পটভূমি ও সংশোধন প্রক্রিয়া
বাংলাদেশ ব্যাংক অনেক আগেই সরকারকে ‘আমানত সুরক্ষা আইন’ করার পরামর্শ দিয়েছিল। ২০২২ সালে একটি খসড়া আইন মন্ত্রিসভার অনুমোদন পায় এবং সংসদেও পাঠানো হয়। তবে সেটি চূড়ান্ত অনুমোদন না পাওয়ায় বর্তমানে নতুন করে অধ্যাদেশ জারি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দায়িত্ব নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে খসড়া আইন সংশোধন করে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের (IADI) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার নির্দেশ দেন।
নতুন বিধানের মূল দিক
১. নতুন তহবিল গঠন:
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম, বার্ষিক ঝুঁকি ভিত্তিক প্রিমিয়াম ও বিশেষ প্রিমিয়াম নেওয়া হবে।
ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধনের ০.৫% প্রারম্ভিক প্রিমিয়াম হিসেবে জমা দিতে হবে।
২. সুরক্ষা ব্যবস্থা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ:
বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে ‘আমানত সুরক্ষা বিভাগ’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে চেয়ারম্যান করে ৭ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ থাকবে, যা সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ করবে।
পর্ষদ প্রতি তিন বছর পর আমানত সুরক্ষার সীমা পুনর্বিবেচনা করতে পারবে।
৩. ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আশ্বাস:
গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, ৯৪.৬% ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারী তাদের সম্পূর্ণ টাকা ফেরত পাবেন।
ব্যাংক দেউলিয়া হলে প্রত্যেক আমানতকারীর সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা সুরক্ষিত থাকবে।
৪. তহবিল ব্যবস্থাপনা ও বিনিয়োগ নীতিমালা:
আমানত সুরক্ষা তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের জন্য আলাদা নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা, বৈচিত্র্যময়তা ও তারল্য সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
প্রয়োজনে পেশাদার সম্পদ ব্যবস্থাপক নিয়োগ করা যেতে পারে।
নতুন ‘আমানত সুরক্ষা অধ্যাদেশ’ দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা রক্ষায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি বাস্তবায়িত হলে আমানতকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাংকিং খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে সুষ্ঠু মনিটরিং এবং যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।