সিন্ডিকেটের কবলে পোল্ট্রি খাত, বিপাকে প্রান্তিক খামারিরা
টুইট ডেস্ক: দেশের পোল্ট্রি শিল্পে সিন্ডিকেটের প্রভাব ক্রমেই বাড়ছে, যার ফলে প্রান্তিক খামারিরা চরম সংকটে পড়েছেন। সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ২০-৪০ টাকা বেশি দামে মুরগির বাচ্চা কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও লাভের মুখ দেখছেন না খামারিরা।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন জানায়, সরকার একটি মুরগির বাচ্চার দাম ৪৯-৫৭ টাকা নির্ধারণ করলেও উৎপাদক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে সেটি ৭০-১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অন্যদিকে, গত দুই মাস ধরে ডিমের দাম কম থাকায় খামারিরা প্রায় ৭০০ কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন।
সংগঠনটির সভাপতি মো. সুমন হাওলাদারের সই করা এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, রমজান উপলক্ষে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। ফলে স্বল্প মূল্যে ডিম-মুরগি বিক্রি হলেও খামারিরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না।
দাম কম, লোকসানের বোঝা বাড়ছে
বর্তমানে খামারিরা প্রতিদিন প্রায় ৪ কোটি ডিম উৎপাদন করছেন, কিন্তু প্রতি ডিমে ৩ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। প্রতিদিনের লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১২ কোটি টাকা।
মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ ২৮-৩০ টাকা হলেও সরকার নির্ধারিত মূল্য ৪৯-৫৭ টাকা। কিন্তু বাস্তবে সেটি কিনতে হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। খরচ বেশি থাকায় লাভের পরিবর্তে ক্ষতির বোঝা বাড়ছে।
পোল্ট্রি শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
একসময় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামারিদের ওপর নির্ভরশীল ছিল দেশের পোল্ট্রি খাত। তবে বর্তমানে সিন্ডিকেট ও বড় কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের ফলে প্রান্তিক খামারিরা টিকে থাকতে পারছেন না।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কোম্পানির বাণিজ্যিক খামারের তুলনায় প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ ২২.৬০% বেশি এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের তুলনায় ৩৮.৬৬% বেশি। অথচ বড় কোম্পানিগুলো বাজারের মাত্র ২০% উৎপাদন করেও পুরো খাত নিয়ন্ত্রণ করছে।
শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে ভয়াবহ পরিণতি
সুমন হাওলাদার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ঈদের পর ডিম-মুরগির সংকট আরও প্রকট হতে পারে। খামারিরা প্রতিটি ডিমে ৩ টাকা ও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে ১০-২০ টাকা লোকসান গুনছেন। এর পেছনে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিসহ বড় সিন্ডিকেটের প্রভাব রয়েছে।
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খামারিরা। তারা দাবি করেছেন, **সিন্ডিকেট ভেঙে বাজার নিয়ন্ত্রণ, ফিড ও মুরগির বাচ্চার মূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখতে উপযুক্ত নীতিমালা গ্রহণ করা জরুরি।