বাংলাদেশে আরসার গোপন কার্যক্রম: নাশকতার পরিকল্পনা ভেস্তে দিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারের সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গোপন তৎপরতা চালাচ্ছে।

সোমবার (১৭ মার্চ) ভোরে গোপন সংবা‌দে নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পরিচালিত অভিযানে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন সদস্য আটক হয়েছে। তারা বাংলাদেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে।

আরসা সম্প্রতি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে গোপন তৎপরতা চালানোর সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে। তাদের এই কার্যক্রম দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরূপ বিবেচিত হচ্ছে।

আরসার উৎপত্তি ও উদ্দেশ্য

আরসা, পূর্বে ‘হারাকাহ আল ইয়াকিন’ নামে পরিচিত, ২০১২ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গঠিত হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনী, যিনি পাকিস্তানের করাচিতে জন্মগ্রহণ করেন এবং সৌদি আরবে বেড়ে ওঠেন। সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষা করা হলেও মিয়ানমার সরকার আরসাকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে।

বাংলাদেশে আরসার কার্যক্রম ও সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরসার তৎপরতা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা চলছে। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মাদক ব্যবসা, মানবপাচার, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে পরিচালিত পৃথক অভিযানে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ মোট ১০ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও পুলিশের যৌথ অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লী আবাসিক এলাকার একটি বাড়িতে গোপন বৈঠকের সময় আরসার প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা করছিল বলে জানা গেছে।

ময়মনসিংহ নগরীর নতুন বাজার এলাকার ‘সিটি গার্ডেন’ নামক বহুতল ভবনের দশম তলায় ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাটে চার মাস ধরে অবস্থান করছিলেন আরসার চার সদস্য। তাদের চলাচল ছিল সীমিত, এবং ভবনের অন্যান্য বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন না। র‌্যাবের অভিযানে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

উদ্ধারকৃত সামগ্রী ও আইনগত ব্যবস্থা

গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে ৩০ লাখ নগদ টাকা, ১২ ভরি স্বর্ণালংকার, বিদেশি মুদ্রা, ‘আরসা আর্মি’ লেখা নেমপ্লেট, মিলিটারি শার্টসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আদালতে তাদের রিমান্ড চাওয়া হবে।

বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান

বাংলাদেশ সরকার আরসার যেকোনো তৎপরতা কঠোরভাবে দমন করতে বদ্ধপরিকর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে। তবে আরসার উপস্থিতি ও কার্যক্রম রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন।

সাম্প্রতিক এই গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বাংলাদেশে আরসার গোপন কার্যক্রমের একটি বড় অংশ উন্মোচিত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এই সফল অভিযান দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।