বাংলাদেশ বিশ্বের নেতৃত্বে পৌঁছানোর সুযোগ রয়েছে: ড. ইউনূস
টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ বিশ্বের নেতৃস্থানীয় দেশের কাতারে পৌঁছানোর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, “আমাদের অবশ্যই এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।”
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সোমবার (১৭ মার্চ) আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকে ১২৭ জন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশ একটি মস্ত বড় সম্ভাবনাময় দেশ। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে আমরা বাস্তবায়ন করতে পারছি না, মাঝপথে ঠেকে যাচ্ছি। আজকে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, তা বিশাল। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের অগ্রসর হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের ফলে এই সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্ভাবনার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা যেন আমরা হারিয়ে না ফেলি। কারণ, সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলা খুব সহজ। মুহূর্তেই তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।”
প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, “জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে পরাজিত শক্তি দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। পুলিশকে এ ব্যাপারে সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে।”
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “বিদ্যমান আইন মেনে পুলিশকে অবশ্যই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম সহজ করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। অনলাইনে মামলার আবেদন গ্রহণের ব্যবস্থা করতে হবে।”
ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে খুব বেশি সময় নেই। তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে সাত মাস পার করেছি। আমরা বলছি, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই এখনই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ফেলতে হবে। সময়ের জন্য অপেক্ষা করলে কোনো লাভ হবে না।”
তিনি পুলিশের ভূমিকার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “পুলিশকে অবহেলা করে বা পাশ কাটিয়ে দেশ গড়া যাবে না। আইন-শৃঙ্খলা ঠিক না থাকলে যত বড় পরিকল্পনাই হোক, যত টাকাই ঢালুক, কিছুই কাজে আসবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আইন না থাকলে সরকার, গণতন্ত্র, অধিকার—কোনো কিছুই টিকবে না। তাই পুলিশের ওপরই দেশের স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব।”
প্রধান উপদেষ্টা পুলিশের কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য কয়েকটি সুপারিশ দেন। তিনি বলেন, পুলিশের কাজের মূল্যায়ন করতে হবে, যাতে মাঠপর্যায়ে প্রতিযোগিতা আরও গতিশীল হয়।
দেশের পরিবর্তনের জন্য একক নির্দেশ যথেষ্ট নয়, বরং সবাইকে নিয়ে দলগতভাবে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশে যত ধরনের টিম আছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিম হলো পুলিশ।
পুলিশের আধুনিকায়ন ও প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যক্রম আরও দক্ষ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। আমরা চেষ্টা করব এ সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে। পুলিশ বাহিনী এই পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।”
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন—স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম ।
এছাড়া মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন—চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব পলাশ, রাজশাহীর পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে যে, বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, পুলিশের আধুনিকায়ন এবং প্রশাসনিক সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমান সরকার এই লক্ষ্যেই কাজ করছে এবং তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতেও এই অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।