গুতেরেসের সফরে আঞ্চলিক রাজনীতিতে কী বার্তা দিলেন!
বদিউল আলম লিংকন: জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের চার দিনের বাংলাদেশ সফর শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না; বরং এর মধ্যে আঞ্চলিক রাজনীতির নানা বার্তাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
১. রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আঞ্চলিক বার্তা
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের মাধ্যমে গুতেরেস মিয়ানমারকে সরাসরি বার্তা দিয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও টেকসই প্রত্যাবাসন জরুরি।
একই সঙ্গে, তিনি ভারত ও চীনসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোকে এই সংকট সমাধানে আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিশেষ করে চীন, যেটি মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে, তার ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা তিনি উল্লেখ করেছেন।
২. দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রশ্ন
মহাসচিব বাংলাদেশ সফরে রাজনৈতিক দল ও সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যা দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের গুরুত্ব বাড়ানোর একটি কৌশলগত উদ্যোগ।
এটি বোঝায় যে, জাতিসংঘ শুধু মানবিক সংকট নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও গুরুত্ব দিচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের যে উদ্বেগ রয়েছে, তা সামাল দিতেও গুতেরেস সফরটি ব্যবহার করেছেন।
৩. ভারত-চীন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
বাংলাদেশ এখন ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে রয়েছে।
গুতেরেসের সফর ইঙ্গিত দেয় যে, জাতিসংঘও এই অঞ্চলে নিজের প্রভাব বাড়াতে চায় এবং বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার একটি মূল কেন্দ্র হিসেবে দেখতে চায়।
ভারত ও চীনের ভারসাম্য বজায় রেখে বাংলাদেশ কীভাবে এগোতে পারে, তা নিয়েও মহাসচিব পরোক্ষ বার্তা দিয়েছেন।
৪. শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা
বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অন্যতম বড় অবদানকারী দেশ।
গুতেরেসের সফর বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের এই ভূমিকাকে আরও দৃঢ় করেছে এবং এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে।
এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশের ভূমিকা জাতিসংঘের দৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ।
৫. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেতৃত্বের বার্তা
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম শিকার দেশ, তবে এটি জলবায়ু অভিযোজনেও রোল মডেল হয়ে উঠছে।
গুতেরেস দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের নেতৃত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং এটি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ শুধু মানবিক সংকট নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার ক্ষেত্রেও একটি মূল খেলোয়াড়।
সফরের সার্বিক বার্তা
গুতেরেসের সফর মূলত বাংলাদেশকে একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে তুলে ধরেছে। তিনি আঞ্চলিক রাজনীতিতে—
রোহিঙ্গা সংকটে সক্রিয় ভূমিকায় চীন ও ভারতের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়েছেন।
বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে জাতিসংঘের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন।
এই সফরের মাধ্যমে জাতিসংঘ কেবল বাংলাদেশ নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও মানবিক পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে চায়—এটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।