গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ে বার্তা দিয়ে ঢাকা ছাড়লেন গুতেরেস
নিজস্ব প্রতিবেদন: জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গত বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) বিকেলে ঢাকায় পৌঁছান। সফরকালে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন, যা বাংলাদেশের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।
সফরের প্রধান কার্যক্রম
১. কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন (১৪ মার্চ): শুক্রবার সকালে মহাসচিব কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন এবং শরণার্থীদের সঙ্গে ‘সলিডারিটি ইফতার’ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুর্দশা সম্পর্কে অবগত হন এবং তাদের প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
২. ঢাকায় জাতিসংঘের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন (১৫ মার্চ): শনিবার সকালে গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবন ‘জাতিসংঘ হাউস’ উদ্বোধন করেন মহাসচিব গুতেরেস। এই কার্যালয় থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে, যা বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সহযোগিতা আরও সুদৃঢ় করবে।
৩. রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপ (১৫ মার্চ): শনিবার দুপুরে মহাসচিব দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে মিলিত হন। তিনি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও সংস্কার উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন এবং জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেন।
৪. সংবাদ সম্মেলন (১৫ মার্চ): শনিবার বিকেলে মহাসচিব গুতেরেস এক সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি রোহিঙ্গা সংকট, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও সংস্কার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন এবং মিয়ানমারে সহিংসতা বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় ভূমিকার ওপর জোর দেন।
৫. জাতিসংঘ কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ (১৫ মার্চ): শনিবার সকালে ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয় পরিদর্শনকালে মহাসচিব গুতেরেস জাতিসংঘ কর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি যে কোনো সংকট ও দুর্যোগে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
৬. ঢাকা ত্যাগ (১৬ মার্চ): চার দিনের সফর শেষে রবিবার (১৬ মার্চ) সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে মহাসচিব গুতেরেস ঢাকা ত্যাগ করেন।
সফরের ফলাফল ও বাংলাদেশের প্রাপ্তি
রোহিঙ্গা সংকটে সমর্থন: মহাসচিব গুতেরেসের রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে সহায়ক হবে। এটি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করবে।
জাতিসংঘের উপস্থিতি বৃদ্ধি: ঢাকায় জাতিসংঘের নতুন কার্যালয় উদ্বোধন বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমর্থন: মহাসচিবের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ ও সংস্কার উদ্যোগে সমর্থন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করবে।
সার্বিকভাবে, মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের এই সফর বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর ও সুদৃঢ় করেছে। এটি ভবিষ্যতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
গুতেরেসের এই সফর শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং এটি বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে আরও দৃঢ় অবস্থান নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।