তাপপ্রবাহের ভয়াবহ এপ্রিল: প্রস্তুতি কতটা কার্যকর?
টুইট ডেস্ক: এপ্রিল মাস ক্রমেই ভয়ংকর হয়ে উঠছে, বিশেষ করে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে। গেল বছর এই মাসে ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিল তাপমাত্রা, যা টানা ৩৫ দিনের অস্বাভাবিক গরম সৃষ্টি করেছিল। আবারও সামনে আসছে এপ্রিল, এবং ইতোমধ্যেই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, খুলনা, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে, যা আরও বিস্তৃত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও সম্ভাব্য প্রভাব-
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর এপ্রিলের তাপমাত্রা আগের রেকর্ড ভাঙছে। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, এবার মাসব্যাপী টানা তাপপ্রবাহের আশঙ্কা কম থাকলেও তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকবে। বজ্রঝড়ের সংখ্যা বাড়তে পারে, যা তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত করতে পারে।
তবে ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ ছাড়া কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, সরকার থেকে আগাম প্রস্তুতির তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে সিটি করপোরেশনগুলো কিছু উদ্যোগ নিতে পারে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, এপ্রিলের গরম কমানোর জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তবে বর্ষার জন্য বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা রয়েছে।
তাপপ্রবাহ প্রতিরোধে করণীয়-
পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর উন্নয়ন পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে। কংক্রিটের আধিক্য কমিয়ে সবুজায়নের ওপর জোর দিতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ-
নগরজুড়ে কংক্রিট কমিয়ে সবুজ অঞ্চল বাড়ানো
ভবন নির্মাণে প্রতিফলক কাচের ব্যবহার সীমিত করা
নগরের জলাধারগুলো পুনরুদ্ধার করে পানির প্রবাহ সচল রাখা
তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ:
হিটস্পট এলাকায় পানি ছেটানো-
শ্রমজীবীদের জন্য নিরাপদ পানির ব্যবস্থা
স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া
বৈশ্বিক উষ্ণতা ও বাংলাদেশ-
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বিশ্বের তাপমাত্রা প্যারিস চুক্তির সীমা ছাড়িয়ে গেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা প্রতি বছরই নতুন রেকর্ড গড়ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসও তাপমাত্রার দিক থেকে নজিরবিহীন ছিল।
পরিবেশ গবেষক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশেও তাপমাত্রা বাড়ার ধারা অব্যাহত রয়েছে। এবছরও এপ্রিল মাস গরমের দিক থেকে ব্যতিক্রম হবে না। তাপপ্রবাহ কৃষি ও জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।” জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত মনে করেন, “তাপপ্রবাহের ক্ষতি কমাতে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার পাশাপাশি তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে হবে। শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং জনসচেতনতা বাড়ানো জরুরি।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রশাসক এজাজ আহমেদ জানিয়েছেন, গত বছর হিট অফিসার নিয়োগ করা হলেও এবার তারা ভিন্ন পদ্ধতিতে কাজ করবে। ঢাকায় প্রায় ১০০ একরের জলাধার সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৯টি জলাধার মুক্ত করা হয়েছে এবং এগুলো যাতে দখল না হয়, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
তীব্র তাপপ্রবাহের প্রভাব কমাতে নগর পরিকল্পনা ও পরিবেশ সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বৃক্ষরোপণ, জলাধার সংরক্ষণ এবং তাৎক্ষণিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ বিপর্যয় সামাল দেওয়া সম্ভব। প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।