১৬টি ব্যাংকের ঋণসীমা লঙ্ঘন: ব্যাংক খাতে নতুন সংকেত

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমা লঙ্ঘন করে গত ডিসেম্বর মাসে রেকর্ড ১৬টি ব্যাংক অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ করেছে।

এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে আটটি প্রচলিত ধারার ব্যাংক এবং আটটি ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা ও সীমা লঙ্ঘন

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রচলিত ব্যাংকগুলোর জন্য সর্বোচ্চ এডিআর সীমা ৮৭% এবং শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য ৯২% নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে প্রচলিত ব্যাংকগুলো ৮৭ টাকা এবং ইসলামি ব্যাংকগুলো ৯২ টাকা পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করতে পারে। কিন্তু ডিসেম্বরে ১৬টি ব্যাংক এই সীমা লঙ্ঘন করেছে, যা ব্যাংক খাতে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ঋণসীমা লঙ্ঘনকারী ব্যাংকগুলোর তালিকায় রয়ে‌ছে-প্রচলিত ধারার ব্যাংক-
১. ন্যাশনাল ব্যাংক – ১১৩.৫৬%,
২. এবি ব্যাংক – ৯৮.৫৪%
৩. বেসিক ব্যাংক – ৯২.৬২%
৪. জনতা ব্যাংক – ৯৪.৬৬%
৫. আইএফআইসি ব্যাংক – ৯১.৩৪%
৬. ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) – ৯১.৩৯%
৭. পদ্মা ব্যাংক – ৮৭.৯০%
৮. প্রিমিয়ার ব্যাংক – ৮৭.৩৭%

ইসলামি শরিয়াহভিত্তিক ধারার ব্যাংকগু‌লো ম‌ধ্যে-
১. ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক – ১২৮.৫৩%
২. সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক – ১১৫.৬৩%
৩. ইউনিয়ন ব্যাংক – ১১৫.৬৩%
৪. এক্সিম ব্যাংক – ১১০.৬৮%
৫. গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক – ১০৬.৭১%
৬. ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ – ৯৩.৩৭%
৭. স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক – ৯৫.১৪%
৮. বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক (ইসলামী শাখা) – ১৪০.০৫%

ব্যাংক কর্মকর্তাদের বক্তব্য

ন্যাশনাল ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শেখ আখতার উদ্দিন আহমেদ বলেন, “গ্রাহকদের টাকা তোলার চাপ বেড়ে যাওয়ায় আমানত কমেছে, কিন্তু ঋণের স্থিতি একই আছে। এছাড়া, বেশ কিছু ঋণগ্রহীতা জেলে থাকায় ঋণ আদায় সম্ভব হয়নি, যা আমাদের এডিআর বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে আমরা ঋণ পুনরুদ্ধারে মনোযোগ দিচ্ছি।”

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত এমডি জানান, “সাম্প্রতিক সময়ে আমানত তুলে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু নতুন ঋণ বিতরণ হয়নি। ফলে আমানতের তুলনায় ঋণের অনুপাত বেড়ে গেছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া ও পদক্ষেপ

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান জানান, “ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) সীমা অতিক্রম করা ঝুঁকিপূর্ণ, যা আমানতকারীদের জন্যও উদ্বেগজনক। আমরা ব্যাংকগুলোকে দ্রুত ঋণ আদায় ও আমানত সংগ্রহের নির্দেশনা দিয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে এপ্রিল-মে মাসে। তাই আগের নোটগুলো পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়া হবে। তবে ব্যাংক খাতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব।”

ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিআর সীমা লঙ্ঘনের ফলে কিছু ব্যাংক তারল্য সংকটে পড়তে পারে এবং আমানতকারীরা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। তারা দ্রুত ঋণ পুনরুদ্ধার এবং নতুন আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

ব্যাংকগুলোর এই অতিরিক্ত ঋণ বিতরণ সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি সতর্কবার্তা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তাহলে ভবিষ্যতে ব্যাংক খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।