হলফনামা: কয়েকগুন সম্পদ বেড়েছে রাজশাহীর এমপিদের
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর সবকটি সংসদীয় আসনের বর্তমান এমপিদের আয় বেড়েছে কয়েকগুণ। আয় বৃদ্ধির হারে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন সদর আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নিজেদের দেওয়া হলফনামা এবং ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দেওয়া হলফনামা সূত্রে এ তথ্যের পরিসংখ্যানে এসব বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে।
হলফনামার তথ্য সূত্র বলছে, সম্পদ বেড়েছে রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর। ২০১৮ সালে ফারুক চৌধুরীর নিজ নামে নগদ টাকা দেখিয়েছিলেন ৯০ লাখ ৯৫ হাজার ৬০২ টাকা। নির্ভরশীলদের নামে কোন টাকা ছিল না। স্ত্রীর নামে ছিলো ৩৩ লাখ ৯৭ হাজার ১১৪ টাকা ছিলো।
২০২৩ সালে এসে স্ত্রীর নগদ টাকা কমে হয়েছে ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৪ টাকা। তবে বেড়েছে নির্ভরশীলদের নামে। শূন্য থেকে নির্ভরশীলদের নামে এবার নগদ টাকা জমা হয়েছে ২৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৬৬ টাকা।
২০১৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থ কিছুই ছিল না। এবার ফারুক চৌধুরীর নিজ নামে তিনধাপে জমা হয়েছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬০৬ টাকা, ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও দুই কোটি ৯৪ লাখ ১২ হাজার টাকা। যা মোট ৯ কোটি ৩৮ হাজার ৬০৬ টাকা।
নির্বাচন কমিশনে দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের আওয়ামী লীগ ও বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর বার্ষিক আয় ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ২০১ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী আয় ছিল ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। আয় মাত্র তিন লাখ বাড়লেও সম্পদ বেড়েছে কয়েক’শ গুণ। অবশ্য ২০০৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৮৮ লাখ ৫২ হাজার ৯২৪ টাকা।
এদিকে, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে বর্তমান এমপি ও ওয়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার সম্পদ এবং আয় দুটিই বেড়েছে। তিনি এবার চতুর্থ বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর আগে তিন বার এমপি হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালে বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
ফজলে হোসেন বাদশার এবার বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ৪৪২ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় তার আয় ছিল সাত লাখ ৫০০ টাকা। এর আগে ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার আয় দেখানো হয়েছিল ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৭২ টাকা। তার পাঁচ বছর আগে ২০০৮ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ২ লাখ দুই হাজার টাকা। গত পাঁচ বছরে ফজলে হোসেন বাদশার সম্পদের পরিমাণ ও আয় বেড়েছে হাজার গুণ।
একই আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মোহাম্মদ আলী কামাল এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার বার্ষিক আয় ১২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের বর্তমান এমপি আয়েন উদ্দিনের আয়ও বেড়েছে মাত্র ৪ লাখ টাকা। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তার বর্তমান বার্ষিক আয় ৩৫ লাখ ২১ হাজার ৮৬৩ টাকা। ২০১৮ সালে দেখানো হয়েছিল ৩১ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৫ টাকা। ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আসাদুজ্জামান আসাদের বছরে আয় ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের বর্তমান এমপি এনামুল হক এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। টানা তিনবারের এমপি তিনি। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় তার বার্ষিক আয় এবার বেড়েছে বলে দেখিয়েছেন। তার বার্ষিক আয় ১ কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ২৭১ টাকা। গত নির্বাচনে যা ছিল ৪৯ লাখ টাকা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ছিল ৫০ লাখ টাকা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ছিল ২০ লাখ টাকা।
ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আবুল কালাম আজাদ এবার প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। হলফ নামায় তিনি তার বার্ষিক আয় ১ কোটি ৭ লাখ ১০ টাকা দেখিয়েছেন।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের বর্তমান এমপি ডা. মনসুর রহমানের বার্ষিক আয় ৯২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৭ টাকা। ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া আবদুল ওয়াদুদ দারার বার্ষিক আয় ৩০ লাখ ৪৪ হাজার ২২৯ টাকা।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট-বাঘা) আসনের বর্তমান এমপি ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বার্ষিক আয় ৭ সাত কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার ২৫৪ টাকা দেখিয়েছেন হলফনামায়। গত সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ৩ কোটি ৪৪ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৮ টাকা। আর ২০১৪ সালে তার আয় দেখানো হয়েছিল ১ কোটি ১৫ লাখ ১৩ হাজার ১৮০ টাকা।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন রাজশাহী জেলার সভপতি আহমেদ সফিউদ্দীন বলেন, ‘হলফনামা জনগণকে দেখানোর জন্য চালু করা হয়েছিল। জনগণ যেন দেখেন- আগে সম্পদ কত ছিল, জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর সম্পদ কত হলো? কিন্তু এখন জনগণ মেনেই নিয়েছেন যে, সম্পদ বাড়ানোর জন্যই তারা জনপ্রতিনিধি হন। জনপ্রতিনিধিরা চেয়ারে বসলেই সম্পদ বেড়ে যায়- এটাই বাস্তবতা। এতে জনগণ আর আশ্চর্য হন না। এটাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে।’