ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফুঁসছে দেশ
টুইট ডেস্ক: সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় সারা দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ তীব্র প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন।
বিশেষ করে মাগুরায় ৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে।
শিশুটিকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (পিআইসিইউতে) রাখা হয়েছে। সেখানে তার উন্নত চিকিৎসা চলছে।
রোববার (৯ মার্চ) দিবাগত রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
হাসপাতালের একটি বিশেষায়িত ইউনিট পিআইসিইউ। সেখানে গুরুতর অসুস্থ শিশুদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দেওয়া হয়। সিএমএইচের এই ইউনিটে আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করেন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুপুরে মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে আট বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার।
এছাড়াও গাজীপুরের শ্রীপুরে নারী দিবসে ৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ করে ভিডিও ধারণ এবং এক কওমী মাদ্রাসার শিশু শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এসব ঘটনা সারা দেশে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এই ঘটনার দ্রুত বিচার ও দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
শনিবার রাত থেকে ঢাবি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু হয়। রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিভাগের ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
অপরাজেয় বাংলার সামনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে প্রতিবাদ সমাবেশে অংশ নেন। রাত ৮টায় ‘ধর্ষণবিরোধী মঞ্চ’ নামক একটি সংগঠন রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে মশাল মিছিল শুরু করে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে পুনরায় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে তারা ধর্ষকদের প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান।
জাবির শিক্ষার্থীরা মাগুরার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করে ধর্ষকদের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
রাবির শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তারা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির দাবি জানান।
বাকৃবির শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ জানান। তারা দোষীদের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।
শিক্ষার্থীদের মশাল মিছিল-ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনার প্রতিবাদে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিনসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই মিছিলে অংশগ্রহণ করেন।
সমাজের প্রতিক্রিয়া-নারী ও শিশু নির্যাতনের এই ঘটনাগুলো সমাজে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সামাজিক সংগঠনগুলো দোষীদের দ্রুত বিচার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নরসিংদী জেলা শাখা নারী নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের প্রতিবাদে নরসিংদী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে সরকার ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে ধর্ষণ মামলার বিচার ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হয় এবং তদন্ত ১৫ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। এছাড়া, তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা যাবে না।
সারাদেশে চলমান এই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সামাজিক সংগঠন ও সাধারণ জনগণ একত্রিত হয়ে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাদের একমাত্র দাবি—দোষীদের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করে নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা।
বাংলাদেশে যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সমাজের বিভিন্ন স্তরে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদের সৃষ্টি হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি ২০২৫- মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফেব্রুয়ারি মাসে ২৯৫টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যা জানুয়ারি মাসের তুলনায় ২৪টি বেশি।
এর মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা ৫৭টি, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ১৭টি এবং ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ২টি।
কালের কণ্ঠের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত পাঁচ বছরে দেশে ছয় হাজারের বেশি নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ৪০১ জন নারী ধর্ষণ ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
সরকার ধর্ষণ ও নারী-শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করছে।
সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো সমাজে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সমাজের সকল স্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।