রমজানের বাজার: চলছে অল্প সময়ে বেশি টাকা উপার্জনের প্রতিযোগিতা
টুইট ডেস্ক: রমজান এলেই বাজারে বাড়তি আয়ের এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয় অধিকাংশ ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কে কাকে কীভাবে ঠকিয়ে অল্প সময়ে বেশি টাকা উপার্জন করতে পারে তারই প্রতিযোগিতা চলে। তাছাড়া ঈদে পরিবারের সবার জন্য বড় অংকের টাকা খরচ হবে সে চিন্তা তো মাথায় থাকেই। ফলে রমজান মাসে সব খরচ পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলে পুরো মাসব্যাপী এমন মন্তব্য করেছেন মেহেরপুরের গাংনী এলাকার অধিকাংশ ক্রেতা সাধারণ।
গাংনী বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বাবু জানান, বিশ্বের অনেক দেশে রমজান মাসে পণ্যের দাম কমানো হয়, কিন্তু আমাদের দেশে ব্যবসায়ীরা মনে করেন রমজান আসছে মানেই পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে বেশি বেশি লাভ করতে হবে। এক মাস ব্যবসা করেই যাতে ছয় মাস ঘরে বসে খাওয়া যায়। এমন মানসিকতা নিয়েই অধিকাংশ ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে থাকে।
তিনি আরও জানান, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রমজানের ঠিক আগ মুহূর্তে টার্গেট করে হাতে গোনা কয়েকটি পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে। পণ্যের সংকট রয়েছে বলে দাম বাড়িয়ে দিয়ে দোষ চাপাতে চায় বিভিন্ন কোম্পানির ওপর। কেউ বলেন বৈশ্বিক সংকট, কেউ বলেন সরবরাহ ঘাটতি, অজুহাতের যেন শেষ নেই।
বাজার করতে আসা ক্রেতা আবু সাঈদ জানান, রমজানের আগে বাজারে পণ্য ভরপুর থাকে, কিন্তু রমজান শুরু হলে হঠাৎ করে সব উধাও হয়ে যায়। যেমন তেল, পেঁয়াজ, চিনি, ছোলা, লেবু, বেগুনসহ ইফতারির কাজে ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। যতটুকু পাওয়া যায় তার দাম আকাশচুম্বী। তবে এবার পেঁয়াজ আলুর দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও দ্বিগুণ হারে বেড়েছে বেগুন, শসা ও লেবুর দাম পটল ও ঢেঁড়সের দাম। গরুর দুধের দামও বেড়েছে প্রতি কেজিতে ত্রিশ টাকা। বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও মিছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। সংকটের কারণে এক থেকে দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল মিললেও তা বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট রয়েছে বাজারে। তাছাড়া রমজানের শুরুতেই শসা, বেগুন, ঢেঁড়স, করলা, পটল ও লেবুর দাম প্রায় দ্বিগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ভোক্তারা দুষছেন ব্যবসায়ীদেরকে আর ব্যবসায়ীরা দুষছেন কৃষকদেরকে। খোলা সয়াবিনের বাজারে কোনো ঘাটতি নেই বলেও জানান এনামুল হক, বজলুর রহমানসহ একাধিক মুদির দোকানদার।
তবে হতাশার মধ্যেও কিছুটা আশার খবর হচ্ছে রমজানের কিছুটা ঘাটতি পূরণ করতে সরকারি উদ্যোগে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বাজার মনিটরিংয়ে প্রশাসনের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন শাওন জানান, ইসলাম আমাদের ন্যায় বিচার, সততা ও মানবিকতার শিক্ষা দেয়। রমজান এলেই মুনাফা লোভীদের দৌরাত্ম্য বাড়ে। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবের বদলে তাদের দুর্ভোগ আরও তীব্র করা হয়।
প্রশাসনিক ভাবে বাজার মনিটরিং হলেও বাজার ব্যবস্থাপনায় আরও কঠোর হওয়া এবং সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি, ব্যবসায়ীদেরও ভাবতে হবে- শুধু মুনাফা নয়, নৈতিকতার দিকেও নজর দেওয়া জরুরি। রমজান মুনাফার নয়, সংযমের মাস। তাই আসুন, এই পবিত্র মাসের শিক্ষা বাস্তবে প্রয়োগ করি এবং রোজাদারদের দুর্ভোগ লাঘবে সকলে সচেষ্ট হই।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা জানান, শনিবার (৮ মার্চ) বিকেলে বাজার মনিটরিংয়ের সময় দেখা গেছে, রমজান উপলক্ষে মানুষের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে। সব ব্যবসায়ীকে সচেতন ও সতর্ক করা হয়েছে। পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা বা ভোক্তাদের ঠকিয়ে অধিক মুনাফা করছে এমন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।