ছিনতাই, থানায় লিখতে হলো ‘‘হারিয়ে গেছে’’: পুলিশের আগ্রহ জিডিতে

  • ছিনতাই হলেও অভিযোগ নয়, থানায় লেখা হয় ‘হারানো’
  • মামলা নয়, ছিনতাইয়ের ঘটনায় জিডিতেই সীমাবদ্ধ পুলিশ

টুইট ডেস্ক : রাজধানী ঢাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা নিত্যদিনের বাস্তবতা হলেও, এ সংক্রান্ত মামলার হার অত্যন্ত কম। সূত্রমতে, ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া ভুক্তভোগীদের মাত্র ১% থানায় গিয়ে মামলা করতে পারেন। বাকি ৯৯% ক্ষেত্রে মামলা না নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার দিকেই পুলিশের বেশি আগ্রহ দেখা যায়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, থানায় গেলে মামলা না নিয়ে তাদের বিভিন্ন কারণে নিরুৎসাহিত করা হয়। অনেকে জানান, পুলিশ কখনো কেবল জিডি গ্রহণ করে, আবার কখনো ঘটনাটিকে ‘সাধারণ অপরাধ’ বলে এড়িয়ে যেতে চায়।

ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ

মোহাম্মদপুরে ছিনতাই, থানায় লিখতে হলো ‘হারিয়ে গেছে’

শুক্রবার সন্ধ্যা ৮টার দিকে মোহাম্মদপুর কাজী নজরুল ইসলাম রোডে তারাবির নামাজে যাওয়ার সময় এক ব্যক্তি ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছিনতাইকারীরা অস্ত্র দেখিয়ে তার মোবাইল ও কিছু টাকা ছিনিয়ে নেয়। তবে থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে তাকে লিখতে হয়—সবকিছু ‘হারিয়ে গেছে’।

ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, থানায় গেলে মামলা নথিভুক্ত করানো কঠিন হয়ে পড়ে।

মোহাম্মদপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন, “ফোন, নগদ টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হারালেও পুলিশ আমাকে মামলা না করে শুধু জিডি করতে বলেছে। বলেছে, এসব ঘটনায় মামলা নিলে আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়।”

এছাড়া, অনেক সময় থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তারা মামলার পরিবর্তে সমঝোতার পরামর্শ দেন। গুলশানের এক ভুক্তভোগী জানান, “ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা না থাকার অজুহাত দিয়ে পুলিশ মামলা নেয়নি, শুধু জিডি করার সুযোগ দিয়েছে।”

পুলিশের বক্তব্য

পুলিশ বলছে, প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে, যা সামাল দেওয়া কঠিন। এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, “প্রমাণের অভাবে অনেক ছিনতাই মামলার তদন্ত কঠিন হয়ে যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা অপরাধীদের শনাক্ত করতে পারেন না, ফলে মামলা গ্রহণ করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না।”

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ছিনতাই প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

আইনজীবীদের মতামত

আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা নিলে অপরাধীদের শনাক্ত ও বিচারের আওতায় আনা সহজ হবে।

অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করেন, পুলিশের মামলা না নেওয়ার প্রবণতা অপরাধীদের আশকারা দিচ্ছে, ফলে শহরে ছিনতাইয়ের ঘটনা কমছে না।

জনসাধারণের উদ্বেগ

নগরবাসী বলছেন, রাজধানীতে ছিনতাই এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অপরাধীরা প্রকাশ্যে ছিনতাই করে পালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থার সংকট দূর করতে এবং অপরাধ দমনে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিকরা।