জাতিসংঘের আহ্বান: মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত মামলা প্রত্যাহার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি সমর্থন

টুইট ডেস্ক: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সাংবাদিক, আইনজীবী, ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী, সুশীল সমাজকর্মী এবং মানবাধিকার সুরক্ষাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা বিচারাধীন ফৌজদারি মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।

প্রতিবেদনে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন দ্বারা সুরক্ষিত কর্মকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে এই আহ্বান জানানো হয়েছে।

ওএইচসিএইচআর-এর তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে জেনেভা থেকে প্রকাশিত হয়, যেখানে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের বিষয়গুলো বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তৎকালীন সরকার এবং তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠী ও সংগঠনের সঙ্গে মিলে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। এর মধ্যে রয়েছে কয়েকশ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, হাজারো বিক্ষোভকারীকে গুরুতর শারীরিক নিপীড়ন, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক এবং নির্যাতনসহ অন্যান্য নিপীড়ন।

ওএইচসিএইচআর-এর অনুমান অনুযায়ী, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই মিলিটারি রাইফেল এবং প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটস লোড করা শটগানের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এছাড়া, কয়েক হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে কেউ কেউ স্থায়ীভাবে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক নাগরিকদের ওপর বেআইনি নজরদারি অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং বিচার খাতে সৃষ্ট কাঠামোগত ঘাটতি দূর করতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

ওএইচসিএইচআর বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ আইনের অস্পষ্ট বিধানগুলো সংশোধন করার সুপারিশ করেছে, যা নিয়ন্ত্রণহীন নজরদারির ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এছাড়া, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩, অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, সন্ত্রাসবিরোধী আইন এবং দণ্ডবিধির ফৌজদারি মানহানির বিধান অনুযায়ী সমালোচনামূলক মিডিয়া রিপোর্টিং বা নাগরিক ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করার জন্য ব্যবহৃত ফৌজদারি বিধানের অধীনে গ্রেপ্তার, তদন্ত বা বিচারের ওপর তাৎক্ষণিক স্থগিতাদেশ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনের প্রতি স্বাগত জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে আইনের শাসন সমুন্নত রাখার জন্য কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি অন্তর্বর্তী সরকারে কর্মরত সব ব্যক্তি এবং কোটি কোটি নাগরিককে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশকে এমন একটি দেশে রূপান্তরিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানে সব মানুষ নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে বসবাস করতে পারবে।”

জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সহিংসতা ও অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্তে সহায়তার জন্য একটি দল আগামী সপ্তাহ থেকে ঢাকা সফর করবে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রতি সমর্থনের বিষয়ে আপনি যা বলেছেন সে সম্পর্কে আমি নির্দ্বিধায় নিশ্চিত করতে পারি যে, প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে সমর্থন করতে ইচ্ছুক।”

জাতিসংঘের এই আহ্বান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।