বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপির করণীয়
বদিউল আলম লিংকন: বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বিএনপির সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের ফলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা হারিয়েছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।
এর মধ্যে নতুন রাজনৈতিক শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আবির্ভূত হয়েছে, যা বিএনপির জন্য নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ও করণীয় তুলে ধরা হলো-
১. গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণ
বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপিকে অবশ্যই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি-
সংগঠনকে আরও সুসংহত করতে হবে এবং তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী করতে হবে।
ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের জন্য স্পষ্ট পরিকল্পনা দেওয়া-
জনগণের সামনে একটি সুস্পষ্ট এবং গ্রহণযোগ্য ইশতেহার দিতে হবে, যেখানে অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং দুর্নীতি দমন বিষয়ে কার্যকর নীতিমালা থাকবে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা-
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে হবে।
২. নতুন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে কৌশলগত মিত্রতা
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মতো নতুন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক তৈরি করা গুরুত্বপূর্ণ।
জোট বা সমন্বিত কৌশল-
বিএনপি এনসিপির সঙ্গে আলোচনা করে যুক্তফ্রন্ট গঠনের চিন্তা করতে পারে।
তরুণ নেতৃত্বকে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়া-
এনসিপির মতো তরুণ নেতৃত্বের সঙ্গে বিএনপিকে পরিবর্তনের বার্তা দিতে হবে, যাতে তরুণদের সমর্থন অর্জন করা যায়।
একক শক্তি হিসেবে থাকার পরিবর্তে বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ঐক্য গঠন করা-
বিএনপি এককভাবে নির্বাচন করতে চাইলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কঠিন হতে পারে।
৩. সাংগঠনিক পুনর্গঠন ও নেতৃত্বের আধুনিকায়ন
বিএনপিকে দলীয় কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে এবং জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে হবে।
নতুন ও দক্ষ নেতৃত্ব তৈরি করা-
পুরনো ও দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের বাদ দিয়ে তরুণ ও যোগ্য নেতৃত্ব সামনে আনতে হবে।
তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করা-
প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলকে সক্রিয় করতে হবে।
প্রযুক্তির ব্যবহার-
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে নেতৃত্বের বার্তা জনগণের কাছে পৌঁছানো জরুরি।
৪. ইতিবাচক রাজনীতি ও সহিংসতা পরিহার
আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন: অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে গণজাগরণ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে জনগণের সহানুভূতি অর্জন করা যায়।
সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয়তা-
বিএনপিকে নিজেদের রাজনৈতিক আদর্শ ও পরিকল্পনা তুলে ধরতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে হবে।
সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরা, কিন্তু দেশবিরোধী অবস্থান না নেওয়া-
বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যর্থতা ও দুর্বলতা তুলে ধরতে হবে, তবে জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না।
৫. নির্বাচনী প্রস্তুতি ও ভোটার আস্থা অর্জন
ভোটারদের কাছে যাওয়া-
জনগণের আস্থা অর্জন করতে হলে নিয়মিত মাঠপর্যায়ে কাজ করতে হবে।
নির্বাচনী এজেন্ট ও কর্মীদের প্রশিক্ষণ-
ভোটকেন্দ্র নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রশিক্ষিত নির্বাচনী এজেন্ট থাকা জরুরি।
সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুক্ত করা-
নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্য নিতে হবে।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপির সামনে সুযোগ এসেছে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কার্যকর রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণের। তবে এটি সহজ হবে না, যদি না দল নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জন করে, নতুন রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সমঝোতায় যায়, সংগঠনকে পুনর্গঠন করে এবং ইতিবাচক রাজনীতি চর্চা করে।
যদি বিএনপি এই কৌশলগুলো কার্যকরভাবে গ্রহণ করতে পারে, তবে আগামী নির্বাচন তাদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।