ধেয়ে আসছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আলফ্রেড’
টুইট নিউজ : হারিকেনের সমতুল্য শক্তি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের দিকে ধেয়ে যাচ্ছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘আলফ্রেড’। ঘূর্ণিঝড়টি ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) বেগে বাতাস সৃষ্টি করে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি গত পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে দক্ষিণাঞ্চলীয় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হতে পারে বলে সতর্ক করেছে দেশটির আবহাওয়া ব্যুরো (বিওএম) (সূত্র: বিওএম, অস্ট্রেলিয়া)।
ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান অবস্থা ও প্রভাব
বুধবার পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেড কুইন্সল্যান্ড উপকূল থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার (২৫০ মাইল) দূরে অবস্থান করছিল। এটি ক্যাটাগরি ১ হারিকেনের শক্তি নিয়ে শুক্রবার ভোরের দিকে ব্রিসবেনের দক্ষিণে উপকূল অতিক্রম করতে পারে (সূত্র: সিএনএন)।
স্থানীয় সরকার জানিয়েছে, ঝড়ের কারণে সমুদ্রের ঢেউ ১০ মিটার (৩২ ফুট) পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ইতোমধ্যে ব্রিসবেনের ২০ হাজার বাড়ি ঝড় ও আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে (সূত্র: আলজাজিরা)।
প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্বেগ
ব্রিসবেনে বসবাসরত বাংলাদেশি প্রবাসী ফারুক রেজা জানান, “ব্রিসবেনে হালকা বাতাস বইছে এবং মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এখানকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত। গত ৫০ বছরে এমন ঘূর্ণিঝড় দেখা যায়নি। তবে অস্ট্রেলিয়া সরকার যথেষ্ট সহায়তা করছে এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ব্রিসবেন শহরে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৪ হাজার বাংলাদেশি থাকেন, তবে বৃহত্তর ব্রিসবেনে এ সংখ্যা প্রায় ৭-৮ হাজার”।
সরকারি সতর্কতা ও প্রস্তুতি
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজ জানিয়েছেন, এটি একটি বিরল ঘটনা। দক্ষিণ-পূর্ব কুইন্সল্যান্ড এবং উত্তর নিউ সাউথ ওয়েলসে (এনএসডব্লিউ) সাধারণত এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় দেখা যায় না (সূত্র: সিএনএন)।
কুইন্সল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী ডেভিড ক্রিসাফুলি বলেন, “এটি দক্ষিণ-পূর্ব কুইন্সল্যান্ডের জন্য বিরল ঘটনা। গত কয়েক দশকে এই অঞ্চলে সাইক্লোনের তাণ্ডব দেখা যায়নি” (সূত্র: আলজাজিরা)।
ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?
ব্রিসবেনের কাছাকাছি সর্বশেষ শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি ছিল ১৯৭৪ সালের ‘জো’, যা শহর ও এনএসডব্লিউর উত্তর নদী অঞ্চলে বড় ধরনের বন্যা সৃষ্টি করেছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারও গোল্ড কোস্ট ও উত্তর এনএসডব্লিউর জনপ্রিয় সৈকত অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে (সূত্র: সিএনএন)।
উপকূলীয় ঝুঁকি ও করণীয়
গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূলীয় ব্যবস্থাপনা গবেষক ড্যারেল স্ট্রাউস জানিয়েছেন, “এ ধরনের ঝড়ের সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে জলোচ্ছ্বাস, উচ্চ ঢেউ ও উপকূলীয় ক্ষয়। ব্রিসবেন থেকে এনএসডব্লিউ পর্যন্ত বিভিন্ন অঞ্চলে এসব সমস্যা দেখা দিতে পারে” (সূত্র: সিএনএন)।
নিউ সাউথ ওয়েলস স্টেট ইমার্জেন্সি সার্ভিস জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে, যা মার্চের গড় বৃষ্টিপাতের চেয়ে অনেক বেশি (সূত্র: আলজাজিরা)।
সতর্কতা ও সম্ভাব্য ক্ষতি
১। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ।
২। ২০ হাজারের বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা।
৩। ৫ মিটারের বেশি উচ্চতার ঢেউয়ের কারণে সৈকত বন্ধ।
৪। বড় বড় ক্রীড়া ইভেন্ট বাতিল, স্কুল বন্ধ।
অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ঘূর্ণিঝড় আলফ্রেডের আগমনের খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুত করতে শুরু করেছেন, ফলে সুপারমার্কেটগুলোতে পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি কর্তৃপক্ষ আশ্রয় কেন্দ্র খুলছে এবং জরুরি সেবা সক্রিয় করা হয়েছে (সূত্র: স্থানীয় সরকার, অস্ট্রেলিয়া)।