রাজশাহী বেতারে ক্ষমতার দৌরাত্ম্য ও অনিয়মের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলেও রাজশাহী মহানগরীর সরকারি দপ্তরগুলো এখনো তাদের দোসরদের আধিপত্যমুক্ত হতে পারেনি। দপ্তরগুলোতে এখনো চলছে তাদের দৌরাত্ম্য, যার অন্যতম উদাহরণ বাংলাদেশ বেতার, রাজশাহী।
গত ১৬ বছর ধরে রাজশাহী বেতারে অনিয়ম ও নৈরাজ্যের অভিযোগ উঠেছে, যার মূল কেন্দ্রবিন্দু উপস্থাপিকা, সংবাদ পাঠিকা ও নাট্যকার রুখসানা আক্তার লাকি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বেতারের অন্যান্য শিল্পীদের বঞ্চিত করে শিল্পী বাজেটের অধিকাংশ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন এবং নিয়ম বহির্ভূতভাবে অধিকাংশ অনুষ্ঠানের দখল নিয়েছেন।
রাজনৈতিক সখ্যতা ও একচ্ছত্র আধিপত্য
রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠতা থাকায় তিনি বেতারে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। শুধু লিটনই নয়, বিভিন্ন এমপি, মন্ত্রী, আমলা ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল, যা তাকে ক্ষমতার স্বর্ণচূড়ায় পৌঁছে দেয়।
অভিযোগ থাকলেও আজও বহাল তবিয়তে আছেন এই বিতর্কিত উপস্থাপিকা। বেতারের বিভিন্ন কর্মকর্তা ও শিল্পী-কলাকুশলীরা এখনো তার কাছে জিম্মি হয়ে আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
পারিবারিক পটভূমি ও রাজনৈতিক সংযোগ
রুখসানা আক্তার লাকির পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তার শ্বশুর খোয়াজ মন্ডল আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা, ভাসুর শরিফুল ইসলাম বাবুল আওয়ামীপন্থী আইনজীবী এবং তার ভাই লিটন কোর্ট এলাকার আওয়ামী লীগের সক্রিয় সদস্য। এমনকি তার স্বামীও আওয়ামী কোটায় চাকরি পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিতর্কিত অতীত ও অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ
২০০৩ সালের আগে লাকি বেতারে অস্থায়ী ভিত্তিতে কেরানির কাজ করতেন। সে সময় তিনবার উপস্থাপনা অডিশনে ব্যর্থ হলেও ২০০৩ সালে তার দুলাভাই বংশীবাদক আব্দুস সালামের তদবিরে উপস্থাপকের কাজ শুরু করেন।
২০১৪ সালে বেতার কর্মকর্তা মো. ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। ফরিদ উদ্দিনকে খুলনায় বদলি করা হলেও লাকি তার ক্ষমতা বজায় রাখেন। এরপর ২০১৫ সালে তৎকালীন কর কমিশনারের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যদিও সেই কর্মকর্তা অবসর নেওয়ার পর বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়।
সবশেষে, কাটাখালি পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্বাসের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেন লাকি। তবে আব্বাস দল থেকে বহিষ্কৃত হলে সম্পর্কের ইতি ঘটে।
তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি
বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী-কলাকুশলী এবং সচেতন মহল তার বিরুদ্ধে দাপ্তরিক ও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি তুলেছেন। বিতর্কিত ব্যক্তিদের বেতার থেকে অপসারণসহ সব অনিয়ম খতিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে।