ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হার কমালো বাংলাদেশ ব্যাংক

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নিরসনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর) দশমিক ৫০ শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে এখন থেকে দৈনিক ৩ শতাংশ হারে নগদ জমা সংরক্ষণ (সিআরআর) করতে হবে, যা আগে ৩.৫ শতাংশ ছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে, ৫ মার্চ থেকে এই নতুন নিয়ম কার্যকর হবে।

এতে বলা হয়েছে, ব্যাংকগুলোকে দ্বি-সাপ্তাহিক ভিত্তিতে মোট তলবি ও মেয়াদি দায়ের ন্যূনতম ৪ শতাংশ এবং দৈনিক ভিত্তিতে ন্যূনতম ৩ শতাংশ নগদ জমা রাখতে হবে। এতদিন দৈনিক ভিত্তিতে এই হার ছিল ৩.৫ শতাংশ।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি বিভাগের প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সিআরআর কমানোর কারণ ও প্রভাব

ব্যাংকগুলোর নগদ জমা সংরক্ষণের হার কমানোর মূল লক্ষ্য মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানো ও অর্থনীতিতে তারল্য সংকট কমানো। বিশেষ করে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম গতিশীল করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পদক্ষেপের ফলে ব্যাংকগুলোর হাতে অতিরিক্ত অর্থ থাকবে, যা তারা ঋণ আকারে বিতরণ করতে পারবে। এতে বাজারে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে এবং বিনিয়োগ খাতের প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হবে।

ব্যাংক ও ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া

সিআরআর হার কমানোর ঘোষণাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ব্যাংকার ও ব্যবসায়ীরা। ব্যাংকগুলোর মতে, এ সিদ্ধান্ত ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা বাড়াবে এবং সুদের হার স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করবে।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজারে তারল্য প্রবাহ বাড়লে উৎপাদনশীল খাতগুলোতে বিনিয়োগের সুযোগ বাড়বে, যা কর্মসংস্থান ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

সঞ্চয় ও মূল্যস্ফীতির প্রভাব

অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদদের একটি অংশ মনে করছেন, তারল্য বাড়লে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত টাকা সরবরাহের ফলে সঞ্চয় প্রবণতা কমতে পারে এবং সাধারণ জনগণের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়তে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিআরআর কমানোর ফলে তারল্য প্রবাহ বাড়লেও অপ্রয়োজনীয় ঋণ বিতরণ ও সম্ভাব্য মূল্যস্ফীতির চাপ রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত ব্যাংক খাতে তারল্য সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সুদহার, বিনিয়োগ প্রবাহ ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সতর্ক থাকতে হবে।