কানাডা, মেক্সিকো, চীনের ওপর শুল্কের খর্গে মার্কিন পুঁজিবাজারে পতন

টুইট ডেস্ক: চুক্তির সময় পেরিয়ে গেছে মন্তব্য করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছেন।

বিবিসি লিখেছে, চলতি বছরের শুরুতে তিনি এ পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন, বলা হচ্ছে- এটি মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে দেখা গেছে দরপতন।

চীন থেকে আমদানি পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। তার মানে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন বাণিজ্যিক অংশীদারই সপ্তাহ কয়েক আগের তুলনায় বাণিজ্যিক বাধার মুখোমুখি হবে।

ট্রাম্প সোমবার হোয়াইট হাউজে বলেন, “মেক্সিকো বা কানাডার জন্য কোনো সুযোগ অবশিষ্ট নেই।

“আপনি জানেন, শুল্কের বিষয়টি ঠিক করাই আছে। এগুলো আগামীকাল থেকে কার্যকর হবে।”

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানিয়া জোলি সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, “স্পষ্ট করে বলতে চাই, ট্রাম্প যদি শুল্ক আরোপ করেন, আমরা প্রস্তুত।”

তিনি বলেন, মার্কিন শুল্কের পাল্টায় অটোয়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি পণ্যের ওপর ১৫৫ বিলিয়ন ডলারের (১২২ বিলিয়ন পাউন্ড) শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছে। প্রথম ধাপে পাস্তা, পোশাক ও সুগন্ধির মতো দৈনন্দিন পণ্যে ৩০ বিলিয়ন ডলারের শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি রয়েছে।

জোলি বলেন, কানাডা বাণিজ্য যুদ্ধ চায় না, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করলে পাল্টা আঘাত হানা হবে।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এও বলেন, “অস্তিত্বের প্রশ্নে শুল্ক আমাদের জন্য একটি হুমকি, কানাডায় হাজার হাজার চাকরি ঝুঁকিতে রয়েছে।”

বিবিসি লিখেছে, মার্কিন শুল্কের পাল্টায় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছে মেক্সিকো এবং চীনও। তাতে বড় ধরনের বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা বাড়ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ মাদক ও অবৈধ অভিবাসীদের ‘অগ্রহণযোগ্য’ প্রবাহের প্রতিক্রিয়ায় কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দেন ট্রাম্প।

গেল মাসেই সব ধরনের শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। পরে কানাডা ও মেক্সিকোর ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নে এক মাস বিলম্বে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। তাতে উত্তর আমেরিকার প্রতিবেশীরা সম্ভাব্য বাণিজ্য যুদ্ধের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে আসে।

তবে ফেব্রুয়ারিতেই চীন থেকে আসা পণ্যে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন ট্রাম্প। তার মানে দেশটির পণ্য এখন অন্তত ২০ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হবে।

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন, বাণিজ্য ভারসাম্য ঠিক করতে এবং দেশীয় শিল্পকে রক্ষায় শুল্ক একটি দরকারি অস্ত্র।

উত্তর আমেরিকায় কয়েক দশক ধরে অবাধ বাণিজ্য সুবিধা উপভোগ করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুন পদক্ষেপের কারণে দেশটি অর্থনৈতিকভোবে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে বলে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন ট্রাম্প।

তার ভাষায়, তাদের এখন যা করতে হবে, তা হল যুক্তরাষ্ট্রে তাদের গাড়ি কারখানা এবং অন্যান্য পণ্য তৈরি করতে হবে, সেক্ষেত্রে তাদের কোনো শুল্ক থাকবে না।

ট্রাম্পের এমন মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তিনটি সূচকে পতন হয়েছে। দিনের শেষে ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ সূচক ১.৪%, এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ১.৭৫% এবং নাসডাক সূচক কমেছে ২.৬%।

সাম্প্রতিক দিনগুলোতে কানাডা ও মেক্সিকোর কর্মকর্তারা ওয়াশিংটনে শুল্ক আরোপ ঠেকানোর চেষ্টা করেন।

মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম সোমবার কোলিমা শহরে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্পকে বলেন, “মেক্সিকোকে সম্মান করতে হবে। সহযোগিতা এবং সমন্বয় প্রশ্নে; হ্যাঁ, অধীনতা কখনোই নয়।”

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো রোববার লন্ডনে ইউক্রেইন বিষয়ক সম্মেলনে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অবৈধ ফেন্টানিল প্রবেশের উৎস বন্ধ করতে চায়, সেখানে কানাডা কোনো বিষয় নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে জব্দ করা ফেন্টানিলের মাত্র ১ শতাংশ কানাডা থেকে আসে বলে ধারণা করা হয়। কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি (সিবিএসএ) বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল প্রবেশ ঠেকাতে তারা নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

কানাডার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যমন্ত্রী অনিতা আনন্দ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ওয়াশিংটনে কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং বলেছেন যে, এক সপ্তাহের মাথায় ফল মিলবে।

তিনি সিবিসি নিউজকে বলেন, “আমরা অবিচল রয়েছি। আমরা যে কোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত, তবে প্রতিটি বাঁকবদলে আমরা আমাদের দেশের অর্থনীতি রক্ষা করব।”

চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদপত্র গ্লোবাল টাইমস লিখেছে, বেইজিং পাল্টা ব্যবস্থা প্রস্তুত করেছে, যা সম্ভবত মার্কিন কৃষি ও খাদ্যপণ্যকে নিশানা করবে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব ধরনের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যা ১২ মার্চ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।

এর পাশাপাশি দেশভেদে শুল্ক আরোপের পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।