সেনাপ্রধানের সতর্কবার্তা: বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
বদিউল আলম লিংকন: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে দেশবাসীকে সতর্ক করেছেন এবং জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
তার বক্তব্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন মহল এই বক্তব্যকে সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত বলে উল্লেখ করেছে, আবার কেউ কেউ এ নিয়ে নানা বিশ্লেষণ করেছেন।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু ছিল
১. জাতীয় ঐক্যের আহ্বান – সেনাপ্রধান রাজনৈতিক বিভক্তি এড়িয়ে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সকলকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
২. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব – তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ ও সহিংসতা বন্ধ করে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখার ওপর জোর দিয়েছেন।
৩. নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা রক্ষা – দেশকে বহিরাগত হুমকি থেকে সুরক্ষিত রাখতে সশস্ত্র বাহিনীর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
৪. আইনশৃঙ্খলার গুরুত্ব – সেনাপ্রধান বলেন, শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
সরকারি প্রতিক্রিয়া
সরকারের পক্ষ থেকে বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, “সেনাপ্রধান কখনো দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেন না। তার বক্তব্য সময়োপযোগী।”
তিনি বলেন, “সেনাপ্রধান আমার জন্য অনেক উঁচু স্তরের লোক। তিনি একটি বাহিনী চালাচ্ছেন। তিনি কোনো কথা না বুঝে বলেননি। এর ইন্টারপ্রিটেশন (ব্যাখ্যা) কী, আপনারা জানেন।”
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শ্রম উপদেষ্টা এ কথাগুলো বলেন ।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দেশ ও জাতির স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার বিষয়ে গত মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সবাইকে সতর্ক করে বক্তব্য দেন। রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন হলের্জা “জাতীয় শহীদ সেনা দিবস ২০২৫” উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান বক্তব্য দেন ।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “আমি সেনাপ্রধানের এই কথাটা-কে খুব পজিটিভলি দেখি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত।”
রোববার (২ মার্চ) একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে উপস্থিত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সেনাপ্রধানের এই কথাটাকে খুব পজিটিভলি দেখি। বিকজ আমাদের কোনভাবেই ভুলে যাওয়া উচিত না যে ১৭ বছর আওয়ামী লীগ কী করেছে। এবং কত রক্তের বিনিময়ে, কত কষ্টের বিনিময়ে, কত গণতন্ত্র হত্যার বিনিময়ে, কত কিছুর বিনিময়ে আমরা আপনারা এখানে বসে আছি। আপনি যে টিভি চ্যানেলটা চালাচ্ছেন এটাও থাকতো না। যদি ৫ আগস্ট না ঘটতো। আমি তো এখানে থাকতামই না। তো আমাদের এই ছোট্ট ছোট্ট পলিটিক্যাল কারণে নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুঁড়ি বা এই জিনিসগুলিতে ওই বিগ পারপাসটা ভুলে যাওয়া যাবে না। আমার মনে হয়, সেনাপ্রধান সেই জিনিসটাই আমাদেরকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।’
গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া
কালের কণ্ঠ: “সেনাপ্রধানের বক্তব্য জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার বার্তা বহন করে।”
দৈনিক ইনকিলাব: “সেনাপ্রধানের কথা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।”
এনডিটিভি (ভারত): “বাংলাদেশের সামরিক নেতৃত্বের সাম্প্রতিক বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ভারতীয় গণমাধ্যম সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করেছে এবং এটিকে “উত্তেজনাপূর্ণ সতর্কবার্তা” বলে উল্লেখ করেছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম একে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রতিফলন বলে ব্যাখ্যা করেছে।
সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মহল থেকে এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হলেও কিছু গণমাধ্যম ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সাম্প্রতিক বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, জাতীয় ঐক্য এবং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার গুরুত্বকে সামনে নিয়ে এসেছে।
তবে সামগ্রিকভাবে তার বক্তব্য দেশকে ঐক্যবদ্ধ রাখার আহ্বান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।