নতুন রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বাগত জানায় বিএনপি: তারেক রহমান

টুইট ডেস্ক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগে স্থানীয় নির্বাচন হলে সেটি হবে স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের একটি প্রক্রিয়া; যা সরাসরি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিএনপির বর্ধিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

‘জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অপ্রয়োজনীয়’

তারেক রহমান বলেন, সরকার যেখানে দেশের বাজার পরিস্থিতি বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ, সেখানে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে। এটি জনগণের বোধগম্য নয় এবং গণতন্ত্রকামী জনগণ এটিকে স্বৈরাচারী শক্তির পুনর্বাসনের ফাঁদ হিসেবে দেখছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষের বিএনপি এই প্রক্রিয়ায় পা দেবে না। গণহত্যাকারী, টাকা পাচারকারী দুর্নীতিবাজ মাফিয়া চক্রকে পুনর্বাসন করার ষড়যন্ত্র বিএনপি কোনোভাবেই মেনে নেবে না।

‘নির্বাচন নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে সরকার’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অভিযোগ করেন, জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য জনমনে ইতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করলেও, সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাদের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের হতাশার কারণ হয়ে উঠছে।

তিনি আরও বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন থাকলেও, সরকার এখনো তাদের কর্মপরিকল্পনায় অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারছে না।

‘গণহত্যাকারীদের বিচার হবে’

তারেক রহমান বলেন, বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে, গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের মুখোমুখি করবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘স্থানীয় নির্বাচন’ আয়োজনের নামে স্বৈরাচারীদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে। বরং দ্রুত একটি সুস্পষ্ট কর্মপরিকল্পনার রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।

‘নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি বিএনপির ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি’

তারেক রহমান বলেন, হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৬-১৭টি নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বিএনপি এসব নতুন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে স্বাগত জানায়। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে।

তিনি বলেন, ‘সকল দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে হলে, সবার আগে নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত রাখতে হবে।’

‘বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনের চিত্র’

তারেক রহমান অভিযোগ করেন, গত দেড় দশকে বিএনপির ৬০ লাখের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ১.৫ লাখ রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। অনেক নেতা-কর্মীকে গুম, খুন ও অপহরণ করা হয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলী ও কমিশনার চৌধুরী আলমের এখনো খোঁজ মেলেনি।

তিনি বলেন, ‘অন্যায় দমন-নিপীড়নের শিকার হয়েও বিএনপির নেতা-কর্মীরা দল ছেড়ে যাননি, স্বৈরাচারের সঙ্গে আপোষ করেননি।’

‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান’

তারেক রহমান বলেন, এখনো বাংলাদেশে গণতন্ত্রবিরোধী চক্রান্ত চলছে, যা ইস্পাত-কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে। গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপিসহ সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ সাত বছর পর বিএনপির বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সর্বশেষ বর্ধিত সভা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি, যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে এরপর আর বিএনপির কোনো বর্ধিত সভা কিংবা কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়নি।