ভারতের কাছে শুল্ক কমানোর অনুরোধ করবে ইইউ

বিশ্ব ডেস্ক: ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার করতে এবং চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে গাড়ি ও মদের ওপর উচ্চ শুল্ক হ্রাস করার জন্য ভারতকে অনুরোধ করার পরিকল্পনা করছে।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের আসন্ন নয়াদিল্লি সফরের আগে ইইউ-এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই তথ্য জানিয়েছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পারস্পরিক শুল্কের হুমকির পুনরাবৃত্তি করে ওই কর্মকর্তা বলেন, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনাকে দ্রুততর করার লক্ষ্যে ইইউ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক কমাতে ভারতকে চাপ দেবে এবং তাদের পণ্য প্রবেশের সুযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানাবে। এর বিনিময়ে, কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে নমনীয়তার প্রস্তাব দেবে ইইউ।

ইইউ প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনের দুই দিনের সফর বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে, যেখানে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর নেতারাও অংশ নেবেন।

এই সফর এমন সময়ে হচ্ছে যখন ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং ব্রাসেলস ও নয়াদিল্লি তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্বের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতার ক্ষেত্র নির্ধারণ করবে।

শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়া‌রি) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের পর বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে আলোচনা করবেন উরসুলা ভন ডার লিয়েন। পরবর্তী বাণিজ্য আলোচনা এ বছর ১০-১৪ মার্চ ব্রাসেলসে নির্ধারিত হয়েছে। ইইউ ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, এবং ২০২৪ সালে পারস্পরিক বাণিজ্য প্রায় ১২৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা গত দশকের তুলনায় প্রায় ৯০% বেশি।

‘ডি-রিস্কিং’ কৌশলের অংশ হিসেবে ইইউ’র লক্ষ্য ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করা, সরবরাহ চেইনে বৈচিত্র্য আনা এবং চীন থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানো। ইইউ ভারতকে দক্ষিণ চীন সাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সাইবার হুমকি ও উত্তেজনা বৃদ্ধিসহ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবেও বিবেচনা করছে।

এছাড়া, ইউক্রেনের নিরাপত্তায় শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়সঙ্গত চুক্তির ব্যাপারে লিয়েন ভারতের সমর্থন চাইবেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে। সাইবার আক্রমণ এবং সন্ত্রাসবাদের মতো সাধারণ হুমকি মোকাবেলায় ইইউ এবং ভারত গোপন তথ্য বিনিময় সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বাণিজ্য বিবেচনা করতে পারে।

তবে, বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফর বাস্তব ফল নাও বয়ে আনতে পারে। দিল্লি-ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্ক গ্লোবাল ট্রেড ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় ভারতের প্রাক্তন আলোচক অজয় শ্রীবাস্তব বলেছেন, ইইউ’র উচিত ভারতকে একটি তথ্য-সুরক্ষিত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া, কারণ ভারত ইতিমধ্যে ইইউকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে।

উল্লেখ্য, যদিও উভয় পক্ষই চীনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন, তাদের মূল ফোকাস ভিন্ন; ভারত সীমান্ত উত্তেজনার ওপর গুরুত্বারোপ করে, যেখানে ইইউ ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত এবং ন্যাটো সম্পর্কিত বিষয়ে বেশি মনোযোগী।