পিলখানা হত্যাকাণ্ড সম্পূর্ণটাই বিডিআর সদস্য দ্বারা সংঘটিত: সেনাপ্রধান

জনগণ সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান-এর উপর ভরসা করছে

টুইট ডেস্ক: বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবের হেলমেট হলে আয়োজিত এক বিশেষ স্মরণসভায় বক্তব্য প্রদান করেন।

২০০৯ সালে পিলখানায় সংঘটিত নির্মম হত্যাকাণ্ডে শাহাদতবরণকারী ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার স্মরণে এ সভার আয়োজন করা হয়।

তিনি এসময় স্পষ্টভাবে বলেন, ‘এই বর্বরতা কোনো সেনাসদস্য করেনি। সম্পূর্ণটাই তদানীন্তন বিডিআর সদস্য দ্বারা সংঘটিত। ফুলস্টপ। এখানে কোনো ‘ইফ’ এবং ‘বাট’ (যদি ও কিন্তু) নাই।’

সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে বিচারিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যদি ‘ইফ’ এবং ‘বাট’ আনেন, তাহলে এতদিন ধরে চলমান বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত হবে। ১৬-১৭ বছর ধরে যারা জেলে আছে, যারা কনভিকটেড, তাদের বিচার ন্যায়সঙ্গতভাবে হয়েছে।’ তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘এই বিচারিক প্রক্রিয়াকে নষ্ট করবেন না। যে সমস্ত সদস্য শাস্তি পেয়েছে, তারা শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘আজকে একটা বেদনাবিধুর দিবস। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আমরা ৫৭ জন চৌকস সেনা অফিসার এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হারিয়েছি। অনেকেই এই ঘটনার ছবি দেখেছেন, কিন্তু আমি এগুলো চাক্ষুষ দেখেছি। আমি একজন প্রত্যক্ষদর্শী।’

সেনাপ্রধান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডে কোনো রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ অথবা বাইরের কোনো শক্তি জড়িত ছিল কি না, তা তদন্ত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারম্যান বিষয়টি তদন্ত করে সঠিক তথ্য তুলে ধরবেন।’

তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই সমস্ত চৌকস সেনাসদস্যরা বিডিআর সদস্যদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। কেউ কেউ বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছেন, যা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।’

সেনাপ্রধান তাঁর বক্তব্যে দেশের নিরাপত্তা ও জাতীয় ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের সতর্ক করে দিচ্ছি, পরে বলবেন যে আমি সতর্ক করিনি। আপনারা যদি নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ভুলে একসাথে কাজ না করতে পারেন, যদি কাদা ছোড়াছুড়ি করেন, মারামারি-কাটাকাটি করেন, তাহলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আজ বলে দিলাম, নইলে আপনারা বলবেন যে, আমি আপনাদের সতর্ক করিনি। আমার অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নাই, আমার একটাই আকাঙ্ক্ষা—দেশ এবং জাতিটাকে একটি সুন্দর জায়গায় রেখে সেনানিবাসে ফিরে যাওয়া।’

সেনাপ্রধানের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, সেনাবাহিনী দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণের আস্থা ও নিরাপত্তার স্বার্থে সেনাবাহিনী দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। সেনাপ্রধানের কড়া সতর্কবার্তা এই বার্তাই বহন করে যে, জাতীয় ঐক্য ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা ছাড়া দেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষা সম্ভব নয়।

সেনাপ্রধানের বক্তব্য বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিচিত্র তুলে ধরেছে। তিনি বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখা, বিভেদ এড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান এবং দেশবাসীকে সতর্ক করেন যে, বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা দেশকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। তাঁর এই দৃঢ় বক্তব্য জনগণের মধ্যে আশার সঞ্চার করেছে এবং সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা আরও সুদৃঢ় করেছে।