ভাঙছে না ছাত্রদের দল, বাড়ছে শীর্ষ পদ
টুইট ডেস্ক: অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গড়ার আগে ভাঙনের সুর উঠেছিল জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে আত্মপ্রকাশ হতে যাওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিদের নতুন রাজনৈতিক দলে। বিশেষ করে সদস্য সচিব পদ কেন্দ্র করে নাগরিক কমিটির নেতারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এরপর দফায় দফায় বৈঠকে বসেন আসন্ন নতুন দলের নীতিনির্ধারকরা।
আলোচনার মাধ্যমে টানাপোড়েন অনেকটা নিরসন হয়েছে বলে জানা যায়। দলের আকার বাড়িয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের অন্তর্ভুক্তির পরিকল্পনা করেছেন তারা। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আহ্বায়ক কমিটি ‘টপ ফোর’ এর পরিবর্তে ‘টপ সিক্স’ হতে পারে।
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অভ্যন্তরীণ সংকট অনেকটাই কেটে গেছে। উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম যে কোনো সময় পদত্যাগ করে আহ্বায়কের দায়িত্ব নিতে পারেন। সদস্য সচিব পদ এখনো চূড়ান্ত না হলেও আখতার হোসেনের থাকার সম্ভাবনা বেশি।
নেতারা জানান, আহ্বায়ক কমিটিতে মুখ্য সংগঠক, মুখপাত্র ছাড়াও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সিনিয়র সদস্য সচিব পদ যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব পদে নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহর থাকার সম্ভাবনা বেশি।
এ ছাড়া শীর্ষ ছয়টি পদের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, তাসনিম জারা ও আরিফুল ইসলাম আদীব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল এবং মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ।
নাগরিক কমিটির নেতারা জানান, নতুন দল ঘোষণার প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ২৬ অথবা ২৭ ফেব্রুয়ারি দল ঘোষণার সম্ভাবনা বেশি। শতাধিক সদস্যের সমন্বয়ে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। নতুন দলের নাম এবং প্রতীক নির্ধারণের কাজও শেষ পর্যায়ে।
দলের সম্ভাব্য নাম হিসেবে ‘বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টি’, ‘নাগরিক অধিকার পার্টি’, ‘বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টি’সহ বেশ কিছু নাম আলোচনায় রয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ইংরেজিতে হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এর আগে জাতীয় নাগরিক কমিটি বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ক্যাম্পেইন চালিয়েছে এবং ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ শীর্ষক জনমত জরিপ পরিচালনা করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদের সৌন্দর্য হলো আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি। আমাদের মধ্যে অনৈক্য নেই, আমরা একতাবদ্ধ। সবার মতামতের ভিত্তিতে আমরা দল গঠন করছি।”
নাগরিক কমিটির সহ-মুখপাত্র সালেহ উদ্দিন সিফাত বলেন, “জাতীয় নাগরিক কমিটি বিভিন্ন মতের মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ফলে কিছু মতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তবে সেসব অমিল সাংগঠনিক ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হচ্ছে। আমাদের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই।”
এদিকে আসন্ন নতুন দলে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক সদস্যদের যোগদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে তিন বাহিনীর সাবেক সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন নেতারা। সেখানে পাঁচ শতাধিক সাবেক সদস্য অংশ নেন। এক নেতা জানান, “আমাদের দলে কয়েক হাজার সাবেক সেনা সদস্য যোগ দেবেন। অনেক পরিচিত মুখ দেখা যাবে।”
নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন বলেন, “আমরা দল ঘোষণার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। কোনো সংকট বা বিরোধ নেই। আশা করি, ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমরা দল ঘোষণা করতে পারব।”