জার্মানির নির্বাচনে ইলন মাস্কের প্রভাব নিয়ে চলছে সমালোচনা

বিশ্ব ডেস্ক: বিশ্বের শীর্ষ ধনী ও টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে ব্যয় সংকোচন টাস্কফোর্সের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মাস্ক, কর্মী ছাঁটাইসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে আগে থেকেই সমালোচিত ছিলেন।

তবে এবার তিনি সরাসরি জার্মানির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।

জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শোলৎসের নেতৃত্বাধীন ত্রিমুখী জোট সরকারের পতনের পর দেশটিতে আগাম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আগামী রবিবারের এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাস্ক তার সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্স (সাবেক টুইটার)-এর মাধ্যমে কট্টর ডানপন্থি অভিবাসনবিরোধী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি-কে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন।

গত ডিসেম্বর মাসে মাস্ক এক্স প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে এএফডি দলকে ‘জার্মানির ত্রাণকর্তা’ হিসেবে আখ্যা দেন এবং বর্তমান চ্যান্সেলর শোলৎসের সমালোচনা করেন। জানুয়ারি মাসে তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে এএফডি দলের একটি ভার্চুয়াল প্রচারণায় যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন।

তার বক্তব্যের অন্যতম বিতর্কিত অংশ ছিল নাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের ৮০তম বার্ষিকীকে সামনে রেখে দেওয়া মন্তব্য, যেখানে তিনি বলেন, ‘জার্মানদের তাদের পূর্বপুরুষদের কৃতকর্মের জন্য নিজেদের দোষী মনে করার কোনো কারণ নেই।’ এছাড়াও, এক্স প্ল্যাটফর্মে একাধিক বার্তার মাধ্যমে তিনি এএফডির পার্টির প্রধান আলিস ওয়াইডেলের প্রশংসা করেন।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, এএফডির দল ২০ শতাংশ সমর্থন নিয়ে জনপ্রিয়তার দিক থেকে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। যদিও অন্যান্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার কারণে তাদের সরকার গঠনের সম্ভাবনা খুবই কম।

জার্মানির রাজনৈতিক মহল থেকে মাস্কের এই ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। দেশটির পরবর্তী চ্যান্সেলর হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকা মধ্য-ডানপন্থি ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (CDU) পার্টির নেতা ফ্রেডরিক মের্জ মাস্কের সমর্থনকে ‘অস্বাভাবিক’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্কের ভূমিকা তদন্তের আহ্বান জানান এবং জার্মান নির্বাচনে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেন।

এদিকে, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে জার্মান আদালত মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সকে নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রুল জারি করেছে। আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, নির্বাচনী প্রচারণার তথ্য ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি ট্র্যাক করতে এক্সকে অবশ্যই নির্বাচনী তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এটি মাস্কের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ এর ফলে তার প্ল্যাটফর্মের কার্যক্রম আরও নিবিড় নজরদারির আওতায় পড়বে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইলন মাস্কের সমর্থন এএফডি-র জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে, তবে এটি মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে কার্যকর সরকার গঠনে যথেষ্ট হবে না। জার্মানির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে, যেখানে বিদেশি হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গ নতুন করে আলোচনায় এসেছে।

জার্মানির আসন্ন নির্বাচন শুধু দেশটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথই নির্ধারণ করবে না, বরং এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব কতটা গভীর হতে পারে, সেটিও এই নির্বাচনের মাধ্যমে স্পষ্ট হবে।