সীমান্ত সম্মেলনে জিরো লাইনে কাঁটাতারের বেড়া নিয়ে আপত্তি বিজিবির

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলন

টুইট ডেস্ক: নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ৫৫তম সীমান্ত সম্মেলনে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কর্তৃক জিরো লাইনে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া স্থাপনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলনে বিজিবির ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিজিবি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, আর বিএসএফের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন বিএসএফ ডিজি দলজিৎ সিং চৌধুরী।

প্রাথমিকভাবে ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, বাংলাদেশে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে পানির বাঁধ ছেড়ে দেওয়ায় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। একই সময়ে মৌলভীবাজার ও ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ায় উত্তেজনা আরো বৃদ্ধি পায়।

সবশেষ লালমনিরহাটের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই দুই দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু হয় এবং ডিজি পর্যায়ের বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকের সূত্র অনুযায়ী, বিজিবি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয় যে, দুই দেশের স্বীকৃত বোঝাপড়া অনুযায়ী জিরো লাইনে কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ নেই। অথচ বিএসএফ একতরফাভাবে অস্থায়ী কাঁটাতারের বেড়া স্থাপন করেছে, যা চুক্তির পরিপন্থী। বিজিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী বেড়া দেওয়ার আগে যৌথ জরিপ করা বাধ্যতামূলক, যা অনেক ক্ষেত্রে মানা হয়নি। ফলে বিজিবির পক্ষ থেকে একতরফা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি জানানো হয়।

অন্যদিকে, বিএসএফ জানায় যে, তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড দুই দেশের বোঝাপড়ার আওতায় হচ্ছে এবং কোনো একতরফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। বিজিবির দাবির জবাবে বিএসএফ জানায়, সীমান্তে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার স্বার্থে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বৈঠকে সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে বিজিবি জোরালো দাবি জানায়। বিজিবির মতে, সীমান্ত হত্যা দুই দেশের জন্যই একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং এটি বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। তবে বিএসএফের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও কখনো কখনো অপরাধচক্র এতটাই আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে যে, আত্মরক্ষার্থে গুলি চালানো ছাড়া উপায় থাকে না। বিএসএফ সীমান্তে অপরাধ রোধে যৌথভাবে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার প্রস্তাবও উত্থাপন করে।

এছাড়া, সীমান্তে চোরাচালান বন্ধ, অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

সীমান্ত সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ও উত্তেজনা নিরসনের লক্ষ্যে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিশেষ করে, জিরো লাইনে বেড়া স্থাপন ও সীমান্ত হত্যা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

তবে, উভয় দেশকেই বিদ্যমান চুক্তি ও বোঝাপড়ার ভিত্তিতে যৌথভাবে সমস্যাগুলোর সমাধানে কাজ করতে হবে, যাতে সীমান্ত পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ থাকে।