কুয়েটে উত্তাল পরিস্থিতি: প্রশাসনিক ভবনে তালা, ভিসি অবরুদ্ধ

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা থেকে উত্তপ্ত ক্যাম্পাস

টুইট ডেস্ক: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উপাচার্যের পদত্যাগসহ পাঁচ দফা দাবিতে বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন। এর ফলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন।

ঘটনার সূত্রপাত

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, যেখানে দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ হয়। সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন শিক্ষার্থী আহত হন, যার মধ্যে ১০ জন গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ছাত্রদলের কিছু সদস্যের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপক্ষ অভিযোগ তোলে, ছাত্রদলের সদস্যরা তাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, ছাত্রদল দাবি করেছে যে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল।

শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলন

মঙ্গলবার রাতেই সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন, এর মধ্যে রয়েছে

উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগ।
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা।
আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বহন করতে হবে।
ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুর ১টার মধ্যে এসব দাবি পূরণের আলটিমেটাম দেন এবং দাবি না মানা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন।

বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা কুয়েটের প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। ফলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ক্যাম্পাসের মেডিকেল সেন্টারে অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকেন।

একইসঙ্গে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের চারপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের হতে দেখা গেছে, অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল বুধবার, তবে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তা স্থগিত করা হয়। পরিবর্তে, দুপুর সাড়ে ১১টায় ভার্চুয়ালি জরুরি সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ মেডিকেল সেন্টার থেকে যোগ দেন।

একজন ডেপুটি রেজিস্ট্রার জানান, প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পর্যালোচনা করছে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।

ক্যাম্পাসে এখনো থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তবে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এদিকে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কুয়েটের এই ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়েছে, যা কুয়েট প্রশাসনের ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলমান অচলাবস্থা নিরসনে কুয়েট প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা হওয়া জরুরি। অন্যথায়, পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।