সড়ক দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক মাসুমা আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীতে কর্মরত বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এখন টিভির সাংবাদিক মাসুমা আক্তার আর নেই। কুমিল্লায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তিনি। চারদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর মঙ্গলবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সাংবাদিক মাসুমা।

মাসুমা আক্তারের বাবার বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুর। তার শ্বশুর বাড়ি কুমিল্লায়। মাসুমা রাজশাহী নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে লেখাপড়া করেছেন। আর সাংবাদিকতা শুরু করেছেন ২০১৪ সাল থেকে।

এখন টিভির রাজশাহী অফিসের সিনিয়র রিপোর্টার রাকিবুল হাসান রাজিব বলেন, গত শুক্রবার বিকেলে মাসুমা ছুটি নিয়ে স্বামীর সঙ্গে কুমিল্লায় শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছিলেন। কুমিল্লায় বাস থেকে নেমে সিএনজির সঙ্গে ভাড়ার বিষয়ে কথা বলছিলেন তারা। এক সিএনজির সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় আরেকটি সিএনজি এসে তাদের সামনে দাঁড়ায়। ঠিক সেই মুহূর্তে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। একটি দ্রুতগামী বাস তাদের ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এতে তারা দুইজনই রাস্তার উপর সিটকে পড়েন।

তিনি আরও বলেন, স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। রাস্তার উপর পড়ে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান মাসুমা। উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা থেকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। পরে পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রো-অ্যাকটিভ মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়। যেখানে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।

রাকিবুল হাসান রাজিব জানান, বরেন্দ্র কন্য মাসুমা আক্তার ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর এখন টিভির রাজশাহী ব্যুরো অফিসে ক্যারিয়ার শুরু করেন। তার গ্রামের বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুরের নারায়নপুর গ্রামে। বাবা-মায়ের দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র মেয়ে ছিলো সে। গুরুদাসপুরেই ছোট থেকে বেড়ে ওঠা তার।

তিনি আরও জানান, গুরুদাসপুরে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে রাজশাহীর নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে স্নাতক ও স্নাতকত্তোর শেষ করেন মাসুমা। পাড়ালেখা শেষে রাজশাহীর বাংলার জনপদ নামের একটি মাল্টিমিডিয়া প্ল্যাটফর্মে কাজ করেন তিনি। পরে এখন টিভি দিয়ে তার টেলিভিশন ক্যারিয়ারের সূচনা হয়। মাসুমা আক্তার স্বল্প দিনের সাংসারিক জীবনে পরিকল্পনা করে ওঠার আগেই সকলের মায়া ছেড়ে গেছেন।

মাসুমা আক্তারের অকাল মৃত্যুতে সাংবাদিক সমাজ, সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজশাহীর প্রায় সকল সাংবাদিক তাদের ফেসবুকে মাসুমার মৃত্যু নিয়ে পোস্ট দিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন।

মাসুমার সিনিয়র রিপোর্টার রাকিবুল হাসান রাজিব তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘‘ফুলের স্টোরি শেষ করে এসে এক গাদা ফুল ধরিয়ে দিলো। বললো; ভাইয়া শুক্রবার ডে-অফ, শনিবার শব-ই-বরাতের ছুটি, আরও দু’দিন বাড়িয়ে ছুটি দেন। শাশুড়িকে দেখতে যাবো।

প্রথমে ভাবলাম বলবো, না মাসুমা ছুটি নিওনা। অনেকগুলো কাজ বাকি। ভাইয়া আসতে চেয়েছেন। এই সব বলে থামাবো।

পরে বললো একটা স্টোরি তুলে দিয়ে যাই। আপনি ভয়েস দিয়ে দিয়েন। বললাম থাক- তুমিই ভয়েস দিবা। ফিরে এসে করো।

ছুটি পেয়ে অনেক হাসলো। বারণ করলাম, বললাম যাও সাবধানে ঘুরে আসো। একটা সুস্থ্য হাসি-খুশি মানুষ কি থেকে কি!!।

জীবনের কিছু অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো না, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা সেমিস্টার আর কর্মজীবনের প্রায় দু’বছর তাকে খুব ডিসিপ্লিন এবং সচেতন হিসেবেই জানি।’’

রাজশাহীর সিনিয়র সাংবাদিক ও এটিএন বাংলার স্টাফ রিপোর্টার সুজাউদ্দিন ছোটন তার ফেসবুকে লিখিছেন, রাজশাহীতে নারী সাংবাদিকতায় সম্ভাবনামায় একজন বোনকে আমরা অকালে হারালাম। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণের জন্য উদ্যোগ নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে সকল সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে। দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

রাজশাহী টেলিভিশন জার্নালিস্ট ইউনিটির (আরটিজেইউ) আহবায়ক বদরুল হাসান লিটন বলেন, মাসুমা আক্তার সাংবাদিকতা পেশায় নিষ্ঠাবান ও প্রতিশ্রুতিশীল ছিলেন। তিনি ছিলেন পরিশ্রমী, সাহসী ও দায়িত্বশীল এক সংবাদকর্মী। তার চলে যাওয়া আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।