২৮ অক্টোবরের সমাবেশকে কেন্দ্র করে সড়কে কমতে পারে যান চলাচল
টুইট ডেস্ক : ঢাকায় আগামীকাল (২৮ অক্টোবর) দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি সমাবেশ ডেকেছে। এছাড়া রয়েছে ছোট ছোট দলের কর্মসূচিও। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দাবি, সমাবেশে কয়েক লাখ লোকের সমাগম ঘটবে ঢাকায়। তবে সমাবেশ হবে শান্তিপূর্ণ।
যদিও নির্বাচনের আগে অতীত ঘটনা স্মরণ করে পরিবহন ব্যবসায়ীরা আছেন কিছুটা ভয় ও শঙ্কার মধ্যে। সমাবেশের সময় প্রারম্ভিক স্টপেজ থেকে বাস ছেড়ে গন্তব্য পৌঁছে, সেখান থেকে আবার প্রারম্ভিক স্টপেজে ঠিকমতো বাসটি পৌঁছাবে কি না সেই শঙ্কাই করছেন তারা। সহিংসতার ভয়ে আগামীকাল সড়কে গাড়ি কমতে পারে বলে জানিয়েছে এ খাতের নেতারা। অন্যদিকে বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কি-না তা নিয়েও শঙ্কা নগরবাসী।
গত ১৮ অক্টোবর এক সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করব। এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। টানা কর্মসূচি চলবে। অনেক বাধা বিপত্তি আসবে। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে অশান্তির এ সরকারের পতন ঘটাব আমরা।
পরদিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এখন বিএনপি-জামায়াত আন্দোলন করছে ঠিক আছে। যদি তারা বাসে আগুন দিতে চায়, আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থাকে বলছি, যারা বাসে আগুন দেবে, সঙ্গে সঙ্গে যে ব্যবস্থা নেওয়ার তাই নেবে; যাতে মানুষের ক্ষতি করতে না পারে, আবার অগ্নিসন্ত্রাস করতে না পারে। আন্দোলন করুক আমাদের আপত্তি নেই।
এদিকে একই দিনে বিএনপির মহাসমাবেশস্থল নয়া পল্টন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। সমাবেশে প্রায় ২ লাখ লোকসমাগম হবে বলেও জানানো হয়েছে।
সমাবেশের এই সময়ে নিরাপদে ঢাকার রাস্তায় চলতে পারবেন কি-না, বাসের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কি-না, ছোট যানবাহনগুলো ভাড়া আকাশচুম্বী হবে কি-না সেসব বিষয়ে নগরবাসীর মনেও শঙ্কা তৈরি করছে।
জয়দেবপুর থেকে নিয়মিত ঢাকার গুলশানে অফিস করেন মোর্শেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, জয়দেবপুর থেকে বিমানবন্দর স্টেশন পর্যন্ত ট্রেনে যাতায়াত করি। পরে সেখান থেকে বাসে গুলশানের অফিসে যাওয়া হয়। প্রতিবারই সমাবেশ হলে দেখেছি, বাস চলাচল কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়। আগামীকাল মাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার ডেট আছে। জানি না নিয়ে যেতে পারব কিনা।
মিরপুর থেকে পল্টন এলাকায় অফিস করেন জোবায়দুর রহমান জয়। তিনি বলেন, পল্টন এলাকায় সমাবেশ হলে পুরো ঢাকা শহরে যানজট ছড়িয়ে পড়ে। তার ওপর নির্বাচনের আগের সমাবেশ। কী হবে না হবে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ নানা কথা বলে। ভয়-ভীতি তো আছেই।
তিনি আরও বলেন, বড় বড় সমাবেশ হলে সবচেয়ে বেশি অসুবিধে হয় চলাচলে। রাস্তায় বাস থাকে না। ১০০ টাকার রিকশা ভাড়া হয় ৩০০ টাকা। ২৫০ টাকার সিএনজি ভাড়া হয় ৬০০ টাকা। আমরা পুরো একটা জিম্মি দশায় থাকি।
মানিকগঞ্জ-ঢাকা রুটের একটি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল কবির বলেন, আশা করি, কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটবে না। কারণ, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বলছে, তারা কোনো ধরনের সহিংসতা করবে না। কিন্তু কোনো সহিংসতা ঘটলেই এবং সেখানে বাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হলে আমাদের অনেক লোকসান হয়। এর আগে অনেক বাস আগুনে পুড়েছে, অনেক স্টাফ পুড়ে মারা গেছে, অনেক বাস মালিক নিঃস্ব হয়েছেন। এসব ইতিহাস আছে। সে জায়গা থেকে একটু শঙ্কা তো আছেই।
গাজীপুর-ঢাকা রুটের একটি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, অতীতে বাসে আগুন দেওয়ার একটা ব্যাপার ছিল। আমরা যারা পরিবহন ব্যবসা করি, আমাদের মধ্যে এই ধরনের আশঙ্কা কাজ করে। পরিবহন বন্ধ রাখার কোনো নির্দেশনা আমাদের নেই। যদি আমাদের পরিবহনের সঙ্গে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তখন আমরা থানায় অভিযোগ করব।
তিনি আরও বলেন, গাড়ি চলবে গাড়ির নিয়মে। তবে আমরা যারা পরিবহন ব্যবসা করি তারা আগাগোড়া চিন্তায় থাকি। সমাবেশ এলাকার মধ্য দিয়ে যে গাড়িটা চলবে, সেই গাড়ি নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে কি না, সেটা নিয়ে সংশয় কাজ করে।
আগামীকাল ঢাকায় সমাবেশ ঘিরে কোনো সমিতির পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার বলেন, আগামীকাল নিয়ে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি ভালো থাকলে গাড়ি চলবে স্বাভাবিকভাবে। পরিবেশ ভালো না হলে হয়ত মালিকরা গাড়ি চালাবেন না।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, তেমন কোন শঙ্কা নেই। বিএনপি অনেক সময় সমাবেশের ডাক দিয়ে ভাঙচুর করে। ওই একটা শঙ্কা আছে। জ্বালাপোড়াও করলে স্বাভাবিকভাবে গাড়ির সংখ্যা কমে যায়। এমন কিছু হলে আগামীকাল ভয়ে গাড়ির সংখ্যা কমে যেতে পারে। তবে আমাদের কোন নির্দেশনা নাই, স্বাভাবিক গাড়ি চলাচলের নির্দেশনা আছে।
এদিকে দূরপাল্লার কয়েকটি পরিবহনের চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা গতরাতে বিভিন্ন গন্তব্য থেকে ঢাকায় ট্রিপ নিয়ে এসেছেন নিরাপদে এবং আজ যাচ্ছেনও নিরাপদে। তবে আজকে রাতে বা আগামীকাল সকালে তারা বাস নিয়ে আবার ঢাকার পথে আসবেন কিনা, সেই বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। সূত্র : ঢাকাপোস্ট