হাছান মাহমুদের দুর্নীতি: পরিবারের ৭০টি ব্যাংক একাউন্টে ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন
- ব্যাংক হিসাব লেনদেন: ৭৫০ কোটি টাকা
- বর্তমান স্থিতি: ২৩.৬০ কোটি টাকা
- দেশ ও বিদেশের সম্পদ: কয়েক হাজার কোটি টাকা
- বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর ও অন্যান্য অর্থ: অপ্রকাশিত
- মোট আনুমানিক অর্থ: প্রায় ৮০০-১০০০ কোটি টাকার বেশি, যদিও বিদেশি সম্পদ এবং অন্যান্য সম্পদের সঠিক হিসাব এখনো যাচাইাধীন।
টুইট ডেস্ক: দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আত্মগোপনে থাকা সাবেক মন্ত্রী ড. মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ। তার স্ত্রী, কন্যা, পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ নামে-বেনামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের বিপুল তথ্য পেয়ে হতবাক দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তারা।
সুত্র হতে জানা যায় তাদের ব্যাংক হিসাবে দেখা যায়, হাছান মাহমুদ, তার স্ত্রী নুরান ফাতেমা, কন্যা নাফিসা জুমাইনা মাহমুদ ও তাদের মালিকানাধীন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ৭০টি ব্যাংক হিসাব পাওয়া গেছে। এসব একাউন্ট থেকে প্রায় সাড়ে ৭ শত কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। বর্তমানে এসব একাউন্টে স্থিতি আছে ২৩ কোটি ৬০ লাখ ৭৪ হাজার ২০২ টাকা। দেশের মেঘনা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, পুবালী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে এসব লেনদেন হয়েছে।
হাছান মাহমুদের স্ত্রী ও কন্যা ছাড়াও তার দুই ভাই, এরশাদ মাহমুদ ও খালেদ মাহমুদের নামেও বিপুল স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের তথ্য মিলেছে। দুদক সূত্রে জানা গেছে, তাদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচার, জমি দখল, পাহাড় দখল, বিলাসবহুল বাংলো ও বাগানবাড়ি নির্মাণ, মাছের খামার পরিচালনা, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় অট্টালিকা নির্মাণ, আবুধাবির আজমানে রিসোর্ট তৈরি-এসব নানা অভিযোগ জমা হয়েছে।
দুদক ইতোমধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। এই টিমের সদস্যরা হলেন উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, উপ-পরিচালক কমলেশ মণ্ডল, সহকারী পরিচালক আল আমিন, সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিল ইসলাম ও সহকারী পরিচালক খোরশেদ আলম। তারা দেশে ও বিদেশে হাছান মাহমুদের হাজার কোটি টাকার সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করেছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মন্ত্রী থাকাকালে হাছান মাহমুদ তার স্ত্রী নুরান ফাতেমাকে জাহাজ ব্যবসায়ী হিসেবে লাইসেন্স পেতে সহায়তা করেছেন। তিনি রূপালী ব্যাংক থেকে ১২ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করায় সুদাসলে এখন পাওনা দাঁড়িয়েছে ১৯.৫ কোটি টাকা। এছাড়া, চট্টগ্রামের এফএমসি গ্রুপ তার বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গ ও হামলার অভিযোগে মামলা করেছে।
দুদকের তদন্ত অনুযায়ী, হাছান মাহমুদ ও তার পরিবারের নামে মেঘনা ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক, এবি ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৭০টি হিসাব রয়েছে। তার নিজ নামে ছয়টি, স্ত্রী নুরান ফাতেমার নামে ১১টি, কন্যা নাফিসার নামে চারটি, এবং বিভিন্ন যৌথ নামে আরও কয়েকটি একাউন্ট রয়েছে। কিছু একাউন্টে বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হলেও কোনো আয়ের উৎস উল্লেখ নেই।
দুদকের অনুসন্ধান অনুযায়ী, চট্টগ্রামের দেওয়ানবাজার, খুলশী, বাকলিয়া, গাজীপুর, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় তার একাধিক বাড়ি ও প্লট রয়েছে। এছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে একটি এলাকা কিনে বাড়ি ও হোটেল করেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, হাছান মাহমুদ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তারা চট্টগ্রামের এফএমসি গ্রুপের জাহাজ নির্মাণ প্রকল্পে প্রতারণার মাধ্যমে একটি ফিশিং জাহাজ হস্তগত করেছেন এবং একটি কন্টেইনার জাহাজ বিনা ব্যয়ে দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
এছাড়াও রাঙ্গুনিয়ায় বন বিভাগের ২১২ একর জমি জোরপূর্বক দখল করে হাছান মাহমুদ সেখানে ব্যক্তিগত বাগানবাড়ি ও গরুর খামার নির্মাণ করেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বন বিভাগ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করেছে।
দুদক জানিয়েছে, আদালতের নির্দেশে গত ১৬ জানুয়ারি হাছান মাহমুদ ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। তদন্তে পাওয়া অন্যান্য সম্পদও জব্দের জন্য আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়- বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেস’কে আগে পরে শব্দ ব্যবহার করে অনেকগুলো একাউন্ট খোলার প্রতারনা করা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে অস্ট্রেলিয়া-বাংলাদেশ সোলার পাওয়ার লিমিটেডের নামে তিনটি একাউন্ট ও সুখি বাংলা ফাউন্ডেশনের নামে দু’টি একাউন্টে লেনদেন।
দুদক জানিয়েছে, গত ১৬ জানুয়ারি আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। অনুসন্ধানে পাওয়া অন্যান্য সম্পদ জব্দের ব্যাপারেও সম্পূরক তথ্য আদালতকে অবহিত করা হবে।