সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগে তালা ইউএনওর বিরুদ্ধে তদন্তের আশ্বাস

টুইট ডেস্ক: সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহের জেরে এক সাংবাদিককে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ মো. রাসেলের বিরুদ্ধে।

রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ইউএনওর কার্যালয়ে পত্রিকার বিজ্ঞাপনের লটারি চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, লটারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ইউএনও শেখ মো. রাসেল বলেন, “আওয়ামী লীগপন্থী ও আওয়ামী লীগ মালিকানাধীন কোনো মিডিয়াকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে না।” এ সময় তিনি সাংবাদিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে একটি বিশেষ চক্রকে ইশারা করেন। এরপর সেই চক্রটি এক সাংবাদিককে অপমান ও হেনস্তা করে কার্যালয় থেকে বের করে দেয়।

ভুক্তভোগী সাংবাদিক জানান, ইউএনও শেখ রাসেল তালায় যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন কেনাকাটা ও কর্মকাণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করছিলেন তিনি। এতে ইউএনও অসন্তুষ্ট হয়ে তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, “বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য সংগ্রহ করায় ইউএনওর নির্দেশেই আমাকে হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে।”

স্থানীয় সাংবাদিক সেলিম হায়দার বলেন, “বিজ্ঞাপন লটারির নামে সাংবাদিকদের রাতভর বসিয়ে রাখা এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে পত্রিকা বাছাই করা অযৌক্তিক।” অন্য এক সংবাদকর্মী এম এ ফয়সাল বলেন, “মালিক রাজনৈতিক দলের হলেও পত্রিকা কোনো দলের হতে পারে না। আজকের ঘটনা খুবই দুঃখজনক।”

অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও শেখ রাসেল বলেন, “কোনো ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে কিছু করা হয়নি। যা ঘটেছে, তা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত। পরে আমার অফিসের স্টাফ ওই সাংবাদিককে ডাকার চেষ্টা করলে তাকে পাওয়া যায়নি।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি জানান, শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ ছেলে শেখ রাসেলের নামের সঙ্গে মিল রেখে তালা ইউএনওর নাম রাখা হয় শেখ মো. রাসেল। তারা আত্মীয়স্বজনও আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ছাত্রজীবনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় প্রত্যক্ষভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তা ছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে তিনি চুয়াডাঙ্গা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে একটি তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেন। পরে প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন তিনি। এখানে যোগদানের পর থেকে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগবিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মিশনে নামেন। মিশন বাস্তবায়ন করতে নানা বিতর্কিত কাজে নিজেকে জড়িয়েছেন।

খুলনা বিভাগীয় কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মো. ফিরোজ সরকার বলেন, “সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সংগঠনগুলো ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।