বেড়েছে ধরপাকড়, কৌশলে ঢাকায় ঢুকছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা

টুইট ডেস্ক : আর মাত্র এক দিন পরই বহুল আলোচিত ২৮ অক্টোবর। এদিন রাজধানীতে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে বিএনপি। পাল্টা সমাবেশ ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও। প্রধান দুই দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনীতি। এই অবস্থায় তৎপরতা বেড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

ঢাকার প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হচ্ছে তল্লাশি চৌকি। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মোবাইল চেক করার অভিযোগ উঠেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ধরপাকড়ও বেড়েছে। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে নানা কৌশলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন। প্রতিবন্ধকতার কথা চিন্তা করে আগেভাগেই তারা রাজধানীতে চলে আসছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকাল থেকে রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয়েছে তল্লাশি চৌকি। সেখানে কারা রাজধানীতে ঢুকছেন তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কোথাও কোথাও মোবাইল ফোন চেক করে দেখছে পুলিশ। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে।

বিএনপির সূত্র জানায়, মহাসমাবেশে আসতে বাধা দেওয়া হতে পারে সেটা আগেই কেন্দ্র থেকে নেতাকর্মীদের জানানো হয়েছে। এজন্য কৌশলে আগেভাগে ঢাকায় ঢুকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাদের। গ্রেফতার এড়িয়ে, কোনো সংঘাতে না জড়িয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক নেতাকর্মী যেন মহাসমাবেশে আসতে পারে সেজন্য বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এমনকি মোবাইল চেক করে যেন কিছু বের করতে না পারে সেজন্য স্মার্ট ফোন সঙ্গে না আনার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।

কেন্দ্রের সেই নির্দেশনা মেনেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন। অনেকে ইতোমধ্যে ঢাকায় এসে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় উঠেছেন। কেউ কেউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশপাশে অবস্থান নিয়েছেন। শুক্রবার থেকেই নয়াপল্টন এলাকায় নেতাকর্মীদের আনাগোনা ব্যাপক হারে বেড়েছে।

আমাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ঢাকার প্রবেশমুখে কয়েকটি স্থানে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে তল্লাশি চৌকি স্থাপন করেছে পুলিশ৷ জেলা পুলিশ জানায়, নারায়ণগঞ্জের পাগলা, সাইনবোর্ড, মৌচাক, শিমরাইল, কাঁচপুর, তারাবো, মদনপুর, ভুলতা, পূর্বাচলসহ কয়েকটি স্থানে রয়েছে তাদের তল্লাশি চৌকি৷

নারায়ণগঞ্জে পুরোনো বিস্ফোরক আইনে ও নাশকতার অভিযোগে করা মামলায় বিএনপির অন্তত ৪৫ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে পুলিশ৷ বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা৷

আমাদের সাভার প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভারের আমিনবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আমিনবাজার ২০ শয্যা হাসপাতালের সামনে সাভার মডেল থানা পুলিশের পক্ষ থেকে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। এসময় পুলিশ সদস্যদের ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহন থামিয়ে যাত্রী ও চালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। পুলিশ সদস্যরা যাত্রীদের পরিচয়, ঢাকায় আসার কারণ জানতে চাচ্ছেন। মাইক্রোবাসের ভেতরের বিভিন্ন অংশে খুঁজে দেখছেন। পুলিশের সঙ্গে সাদা পোশাকে একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সহযোগিতা করতে দেখা যায়।

সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, কাল ঢাকায় বড় দুই রাজনৈতিক দলের সমাবেশকে ঘিরে যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি না হয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সর্বিক তত্ত্বাবধানের লক্ষে রাজধানীমুখী যানবাহনের সন্দেহভাজন যাত্রীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। এটি আমাদের নিয়মিত তল্লাশি কার্যক্রমেরই অংশ।

এদিকে ধামরাই থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকাল থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের ইসলামপুর এলাকায় তাদের পক্ষ থেকে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে। ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহনে যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদসহ তল্লাশি কার্যক্রম চালাচ্ছেন তারা।

ধামরাই থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল কুমার দাস বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে আজ সকাল থেকে ধামরাইয়ের ইসলামপুরে তল্লাশি কার্যক্রম চলছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতের বিভিন্ন সময়ে সাভার ও আশুলিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির অন্তত সাতজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার থানায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতের বিভিন্ন সময়ে পাঁচজন ও আশুলিয়া থানায় দুইজনকে আটক করে পুলিশ। তবে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি যাদের বিরুদ্ধে পূর্বে বিভিন্ন মামলা রয়েছে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান বলেন, আগে যাদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এমন দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির আগে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ও মুন্সীগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামরুজ্জামান রতনের বাসায় গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালানোর অভিযোগ ওঠেছে। অভিযানে বাসায় রতনকে না পেয়ে তার ভাই হাফেজ মোহাম্মদ মুসা কলিমুল্লাহকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বললেও প্রতিদিন সরকারের দমন-নিপীড়ন বেড়েই চলেছে। নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করছে। বিরোধী দলের নেতারা যাতে নির্বাচন করতে না পারে সেজন্য সাজা দিচ্ছে। সরকারের দমননীতি চালিয়ে জোর করে নির্বাচনের চেষ্টা, হাস্যকর প্রহসন-তামাশা ছাড়া কিছু নয়।

দেশের মানুষ নিরপেক্ষ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বহু নেতাকর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করছি। শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশে গ্রেফতার চালাচ্ছে। সরকারের সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো ইচ্ছে নেই। আবারও একতরফা নির্বাচনের জন্য সরকার সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এবার আর সেটা সম্ভব হবে না।