এক্সপ্রেসওয়েতে লেন পরিবর্তন ও যাত্রী নামানো নিষিদ্ধ

  • ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে কঠোর নীতিমালা কার্যকর
  • এক্সপ্রেসওয়েতে জানুয়ারিতে ৯০টি গাড়ির ইঞ্জিন বিকল, ১০টি বড় দুর্ঘটনা
  • টোল প্লাজায় ক্ষতি করলে গাড়ির মালিককে দিতে হবে ক্ষতিপূরণ
  • গাড়ি থামানো নিষিদ্ধ, এক্সপ্রেসওয়েতে জরুরি লেন ব্যবহারের নির্দেশনা
  • এক্সপ্রেসওয়েতে মোবাইল ফোন ব্যবহার ও নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ড্রাইভিং নিষিদ্ধ
  • দুই ও তিন চাকার যানবাহনের জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর চালু হয় ফার্স্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে।

এটি চালুর পর থেকেই বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এক্সপ্রেসওয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাসিব হাসান খান জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত পাঁচটি বড় ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে। সেগুলো হলো—
১. ওভারহিট হওয়া গাড়ি
2. চাকা পাংচার
3. জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়া
4. বিমানবন্দরের যাত্রী সেবা
5. দুর্ঘটনা

এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর থেকে যানবাহন চলাচলের নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। শুধুমাত্র ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচল করা অবস্থায়—

৯০টি গাড়ির ইঞ্জিন সমস্যা হয়েছে
৫১টি গাড়ির টায়ার ব্রাস্ট হয়েছে
২০টি গাড়ির জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে
১০টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে

এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষ এক্সপ্রেসওয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে নতুন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।

১. লেন পরিবর্তন ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ

যান চলাচল নির্দিষ্ট লেনের মধ্যে করতে হবে, সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া লেন পরিবর্তন করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

২. পার্কিং ও থামানোর নিয়ম

এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা পার্কিং করা সম্পূর্ণ নিষেধ, কোনো সমস্যা হলে জরুরি লেনে যেতে হবে এবং কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে

৩. ক্ষতিপূরণ ও আইনি ব্যবস্থা

টোল প্লাজা, টোল বুথ বা এক্সপ্রেসওয়ের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হলে মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, অন্যথায় মামলা হবে

৪. নিষিদ্ধ যানবাহন ও নিরাপত্তা বিধান

অতিরিক্ত কালো ধোঁয়া নির্গতকারী গাড়ি নিষিদ্ধ, উন্মুক্ত বা খোলা যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ পণ্যবাহী যান নিষিদ্ধ

৫. যাত্রী ও গাড়ির নিরাপত্তা

যাত্রী নামানো কঠোরভাবে নিষেধ; বাস বা অন্য যানবাহন যাত্রী নামালে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি গাড়িকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে

৬. পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ সুরক্ষা
যানবাহন থেকে কোনো কিছু (যেমন টোল টিকেট, টিস্যু পেপার) ছুড়ে ফেলা যাবে না

৭. ড্রাইভিং নিরাপত্তা

মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চালাতে পারবেন না।
গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার নিষেধ । অ্যালকোহল, ড্রাগ বা নেশা করে গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ

৮. টোল লেন ও ভারী যানবাহন প্রবেশের নিয়ম

দুই বা তিন চাকার যানবাহন এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ করতে পারবে না। খোলা ট্রাক বা পিকআপে মানুষ থাকলে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ নিষিদ্ধ, একটি গাড়ি অন্য গাড়িকে দড়ি বা অন্য উপায়ে টেনে আনতে পারবে না

টোল লেনে গাড়ির গতি ২০ কিমি/ঘণ্টার কম রাখতে হবে, না হলে লেনের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে

দুর্ঘটনা রোধে কড়া নজরদারি

সংবাদ সম্মেলনে বেশ কিছু দুর্ঘটনা এবং উদ্ধার অভিযানের ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যানবাহনের সুষ্ঠু ও নিরাপদ চলাচল নিশ্চিত করতে কঠোর মনিটরিং করা হবে। আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানীর যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও, চালকদের অসতর্কতা ও নিয়ম না মানার প্রবণতা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। নতুন নীতিমালা কার্যকর হলে শৃঙ্খলা নিশ্চিত হবে এবং এক্সপ্রেসওয়ের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা বজায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।